RSS

ওষুধ ছাড়াই বিষণ্নতা দূর করা সম্ভব

বিশ্বজুড়ে বিষণ্নতায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে। প্রতিযোগিতামূলক আধুনিক বিশ্বে কর্মব্যস্ততার চাপ কেড়ে নিয়েছে মানুষের প্রাণচাঞ্চল্য ও মুখের হাসি। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তনই বিষণ্নতা রোগের মূল কারণ। যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যার ২০ থেকে ৩০ ভাগ পূর্ণবয়স্ক মানুষই বিষণ্নতার শিকার। গত কয়েক দশক পূর্বে এই রোগে আক্রান্তের হার ছিল অর্ধেকের মত। যুক্তরাষ্ট্রের কনসাস শহরে বসবাসকারী মনোবিদ ড. স্টিভ ইলার্ডি বিষণ্নতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। বিষণ্নতার উপসর্গকে মানবমস্তিষ্ক শারীরিক ব্যথা বেদনা বা প্রদাহ বলে ভুল করে। ইলার্ডির মতে তখন মানুষ নিজেকে পরিপার্শ্ব থেকে গুটিয়ে নেয় এবং একা থাকতে চায়। এতে আরো প্রকট হয় বিষণ্নতার উপসর্গ। তার মতে, বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তির উচিত অধিকহারে মানুষের সাথে মেলামেশা করা। ইলার্ডি বলেন, 'অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিষণ্নতার রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ মত ওষুধ সেবন করেন এবং কোনো উপকার পান না। ক্ষেত্র বিশেষে রোগটা আরো তীব্র আকারে ফিরে আসে। তাছাড়া যৌন অক্ষমতা, আবেগের ভারসাম্যহীনতা এবং ওজন বাড়ার মত মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে বিষণ্নতা বিরোধী ওষুধের।' ওষুধ ছাড়াই জীবন-যাপন এবং চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এনে বিষণ্নতা দূর করা শ্রেয় বলে মনে করেন তিনি।


কনসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইলার্ডি ওষুধ ছাড়াই বিষণ্নতা দূর করার একটি চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। থ্যারাপিউটিক লাইফ স্টাইল চেঞ্জ বা টিএলসি নামের এই চিকিৎসাপদ্ধতিতে জীবন-যাপনের ধারা পাল্টানোর মাধ্যমে বিষণ্নতা দূর করা হয়। বিষন্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রথমেই তিনি এর মূল কারণ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেন। তার মতে বিষণ্নতার আসল কারণ লুকিয়ে আছে আমাদের জীবন-যাপনের মধ্যে। তিনি বলেন, 'আমাদের জীবনযাপনের মান অতি দ্রম্নত উন্নত হয়েছে প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে। কিন্তু সেই সাথে জীবনে তৈরি হয়েছে কিছু চোরাবালির। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে গৃহাভ্যন্তরের জীব নয়। পাশাপাশি তাকে পেশার স্বার্থে সামাজিক যোগাযোগ ছাড়তে হচ্ছে। ঘুম কমাতে হচ্ছে এবং একটা নিরানন্দ জীবনের ঘানি টেনে যেতে হচ্ছে। তাই বিষণ্নতা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।'

ড. স্টিভ ইলার্ডি তার সম্প্রতি প্রকাশিত বইতে উলেস্নখ করেছেন, পৃথিবীর পরিবেশ ও মানুষের সভ্যতা যেভাবে দ্রুত পাল্টে গেছে তার সঙ্গে মানবদেহ পালস্না দিয়ে বদলায়নি। গত ১২ হাজার বছরে মানুষের শরীরে এক ইঞ্চিও পরিবর্তন সাধিত হয়নি। তিনি বলেন ,'জৈবিকভাবে আমাদের দেহ এখনো প্রস্তরযুগের সংগ্রামমুখর সময়ের মধ্যেই আটকে আছে। এই আদিম দেহ যখনই আধুনিক পরিবেশের ভেতরে প্রবেশ করেছে তখন থেকেই বিষণ্নতার শুরম্ন।' পরিশ্রম উপযোগী করে তৈরি এই দেহটি এখন শ্রমবিযুক্ত পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে হারিয়ে ফেলেছে নিজের গতি ও অভ্যনত্দরীণ শক্তি। তার মতে, মানবদেহের যে গঠন সেটা রক্ষা করে চলতে হলে একজন মানুষকে প্রচন্ড শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। তাজা ফলমূল ও ভিটামিন সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক খাবার খেতে হবে এবং দশ ঘণ্টা সময় ধরে ঘুমাতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস, পরিশ্রমহীনতা এবং স্বল্প সময়ের ঘুমে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। এমন কী আধুনিক মানুষ পর্যাপ্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শে পর্যন্ত আসে না। মনোরোগ ও মনোবিকলনের এটাই কারণ বলে মনে করেন তিনি।

পৃথিবীতে এখনো যেসব আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের মধ্যে বিষণ্নতার হার শূন্যভাগ। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে আধুনিক জীবন যাপন কতটা ত্রুটিপূর্ণ। ইলার্ডি বিষণ্নতা দূর করতে কমপৰে ৮ ঘণ্টা ঘুম, পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম, প্রচুর তাজা ফলমূল এবং মাছ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, পাশাপাশি সূর্যালোকের সংস্পর্শে দিনের একটা সময় ব্যয় করারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি, চিন্তাধারা থেকে না বোধক ভাবনা ঝেটিয়ে বিদায় করাও গুরম্নত্বপূর্ণ। এ ধরনের পরামর্শ মেনে চললে বিষণ্নতা থেকে দ্রুত মুক্তিলাভ সম্ভব। খাদ্য তালিকা থেকে ফাস্টফুড বিদায় করতে হবে সর্বাগ্রে। যোগ করতে হবে ফলমূল ও মাছ। ফলে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড। এদু'টি উপাদান শরীরকে চনমনে ও উচ্ছ্বল রাখে। বিষণ্নতাকে বিদায় জানাতে এ ধরনের জীবনাভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন