RSS

মাত্রাতিরিক্ত টেলিভিশন শিশুদের মানসিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে

শিশুটিকে কোনোভাবেই টেলিভিশনের সামনে থেকে সরানোর উপায় নেই। সারাদিনই কার্টুন নিয়ে পড়ে আছে। স্কুলের সময়টুকু বাদে বাকি সময় ফাঁক পেলেই হয় কার্টুন নয়ত কম্পিউটার গেমস খেলতে বসে যাওয়া। পড়াশোনায় মনোযোগ নেই, ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও করে না। এমন অভিযোগ তাদের সন্তান সম্পর্কে প্রায় অভিভাবকই করে থাকেন। শিশুদের এই প্রবণতা বিশ্বজুড়েই বাড়ছে। মনোবিদরা সাম্প্রতিক গবেষণার পর জানিয়েছেন, অতিমাত্রায় টেলিভিশন দেখার অভ্যাস শিশুদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণগত সমস্যা তৈরি করে। অভিভাবকদের টিভি রিমোট লুকিয়ে ফেলার কিংবা গেম খেলার কম্পিউটার বা গেমার শিশুদের কাছ থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ১০ থেকে ১১ বছর বয়সী হাজার খানেক শিশুর উপর গবেষণা চালিয়ে টেলিভিশন দেখার ক্ষতিকর প্রভাব খুঁজে পেয়েছেন। গবেষকরা জানান, শিশুরা অতিমাত্রায় টিভি দেখলে বা গেম খেললে, খিটখিটে হয়ে পড়ে, বায়না ধরে মাত্রাতিরিক্ত, অমিশুক হয়ে যায় এবং হাইপার এক্টিভিটি ডিজঅর্ডার বা অতিরিক্ত দুষ্টুমি রোগে আক্রান্ত হয়। এ ধরনের শিশুরা বাড়ির কাজ বা স্কুলের পড়া শেষ করতে পারে না। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ শূন্যের কোঠায় চলে আসে এবং সমবয়সী শিশুদের সাথে সহজভাবে মিশতে পারে না।

গবেষকরা ২৫টি প্রশ্ন সম্বলিত একটি যাচাইপত্র দেন শিশুদের। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেখে তারা নির্ধারণ করেছেন শিশুদের মানসিক অবস্থা কেমন। দেখা গেছে, যেসব শিশু ২ ঘণ্টার উপর টেলিভিশন দেখে তারা প্রশ্নপত্রের উত্তরগুলো লিখতে পারেনি এবং মূল্যায়নে তাদের মান অনেক খারাপ এসেছে। অপরদিকে যারা একদমই টেলিভিশন দেখে না বা কম দেখে তাদের মানসিক স্থিরতার প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। উত্তরপত্রে তারা ভালো নম্বরও পেয়েছে। এমন কী শারীরিক খেলাধুলা করে এমন শিশুরাও অত্যধিক টেলিভিশন দেখার কুপ্রভাব থেকে মুক্ত নয় বলে জানান গবেষকরা। গবেষকরা বলছেন, যেসব শিশু নিয়মিত খেলাধুলা করে সমবয়সী শিশুদের সাথে মিশতে সক্ষম ও বন্ধুত্ব তৈরি করে তারা মানসিকভাবে অধিকতর সবল। লেখাপড়ায় ও তাদের ভালো করার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।


এএফপি অবলম্বনে

জন্মান্ধকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব

জন্ম থেকেই অন্ধ এমন মানুষকেও অদূর ভবিষ্যতে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি চোখের রেটিনার 'কোনসেল' সফলভাবে ইঁদুরের চোখে প্রতিস্থাপন করেছেন তারা। 'কোনসেল'চোখের মণি বা রেটিনার দু'টি গুরম্নত্বপূর্ণ কোষের একটি।

এ ধরনের কোষ রঙিনবস্তু দেখতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা চারবছর পূর্বে ইঁদুরের চোখে রেটিনার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কোষ 'রডসেল' প্রতিস্থাপন করেন সফলভাবে। রডসেল রডকোষ স্বল্পালোক এবং রাতে দেখার কাজে সাহায্য করে। উলেস্নখ্য, রড ও কোন এই দুই ধরনের কোষ দেখার কাজে প্রধান ভূমিকা রাখে।

বিজ্ঞানীরা জন্মান্ধ ইঁদুরের চোখে এই দুই ধরনের কোষ প্রতিস্থাপনে সফল হওয়ার পর মানুষের অন্ধত্ব মোচনেও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন তারা। এ ধরনের কোষ তৈরি করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা মানব ভ্রুণ ব্যবহার করার কথা ভাবছেন। মানব-ভ্রণ বা হিউম্যান এম্ব্রায়োনিক স্টেম সেল দেহের যেকোনো অঙ্গ সৃষ্টিতে সক্ষম। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম চোখের দিকে একধাপ অগ্রসর হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।


এই গবেষনার সাথে যুক্ত ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন বা ইউসিএলের গবেষক জেন সওডেন বলেন, রেটিনায় 'কোনসেল' বা 'কোনকোষের' অনুপস্থিতি বা নষ্ট হয়ে যাওয়া অন্ধত্বের সবচেয়ে বড় কারণ। সওডেন ও তার সহকর্মীরা ইঁদুরের ভ্রুণে এক ধরনের কোষের উপস্থিতি লৰ্য করেন যেগুলো 'কোন' অথবা 'রড' কোষে পরিণত হয়। এ ধরনের কোষের মধ্যে রয়েছে 'কোন রড হোমিবক্স' নামের একটি জিন যা এই দু'টি গুরুত্বপূর্ণ কোষ তৈরিতে ভূমিকা রাখে। ভ্রুণের মধ্য থেকে বিশেষ কোষটি পৃথক করে বিজ্ঞানীরা এর সংখ্যা বৃদ্ধি করেন।

'লেবার কনজিন্যাটাল আমাউরোসিস'নামের ইঁদুরের এক ধরনের জন্মগত অন্ধত্ব দূর করতে বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। অন্ধ ইঁদুরের প্রতিটি চোখের ভেতর ' কোনসেল' তৈরি করে এমন ২ লৰ কোষ ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন গবেষকরা। রেটিনার আলোক সংবেদী কোষের ভেতর নতুন এই কোষগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়। ২১ দিন পর নতুন কোষগুলো এক একটি পূর্ণাঙ্গ 'রড' ও 'কোন' কোষের পর নতুন কোষগুলো এক একটি পূর্ণাঙ্গে পরিণত হয়।

নতুন এই গবেষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ম্যাসাচুসেটসের ওরচেস্টারে অবস্থিত অ্যাডভান্সড সেল টেকনোলজির প্রধান গবেষক রর্বাট লণজা। তিনি বলেন, ২০০৪ সালে চোখের রেটিনায় মানব ভ্রুণ থেকে সফলভাবে রেটিনার কোষ তৈরি হয়েছে। এখন এই গবেষণাও আশার আলো জাগালো। তবে এসবই এখনো খুব প্রাথমিক সত্দরে আছে। অন্ধত্ব দূর করতে যেতে হবে আরো বহুদূর।

পিল নয় পানি পানে স্লিম হোন

স্লিম থাকতে কে না চান। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে নিজেকে স্লিম রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টার কমতি থাকে না। মূলত নিজেকে অন্যের কাছে সুন্দর করে উপস্থাপনই এর লক্ষ্য। সুন্দরীরা স্লিম হওয়ার জন্য রীতিমতো ডায়েট পিল খাওয়া, এমনকি সারাদিন না খেয়ে থাকতেও দ্বিধা করেন না। অনেকে তো খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে পুষ্টিহীন রোগীতে পরিণত হয়। অথচ চিকিত্সকরা বলছেন, স্লিম হওয়ার জন্য অতো খাটাখাটুনির প্রয়োজন নেই। খাবার খাওয়ার আগে নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি পান করলেই এ ব্যাপারে কার্যকর ফল পাওয়া যেতে পারে। খাবার আগে যদি অন্তত দুই গ্লাস পানি পান করেন তাহলে তা দেহের ওজন কমাতে সহায়ক হবে।
সামপ্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, নারী পুরুষের প্রতিদিন গড়ে ২ দশমিক ৭ থেকে ৩ দশমিক ৭ লিটার পানি পান করা উচিত। সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার কিংবা রাতের খাবারের আগে পানি পান করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে এ গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয় সম্প্রতি। মোট ৪৮ জন বাড়তি ওজনের নারী-পুরুষকে নেয়া হয় গবেষণা কাজে। এদের মধ্যে অর্ধেককে খাবার খাওয়ার আগে পানি পান করতে দেয়া হয়। তিন মাস পর দেখা যায় গড়ে তাদের ওজন কমেছে সাড়ে ১৫ পাউন্ড করে। আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির এ গবেষণায় অংশ নেয়া গবেষক ব্রেন্ডা ডেভি জানান, যারা ওজন কমাতে চান তাদের সব সময় পানির বোতল সঙ্গে রাখা উচিত। আর মূল খাবার খাওয়ার ২০ মিনিট আগে দুই কাপ পানি পান করলেই যথেষ্ট। শুধু তাই নয়, নিয়মিত এভাবে পানি পান করলে ওজন কমার ধারাও অব্যাহত থাকবে। ফলে শরীরের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাও সম্ভব হবে।
গবেষক স্টেফিন কুক এ প্রসঙ্গে বলেন, মানুষের ওজন কমানোর অন্যতম নিরাপদ উপায় হচ্ছে খাবার আগে পানি পান করা। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

শুচিবাই থেকে দূরে থাকুন

পৃথিবীজুড়ে হাজারো মানুষ ভুগছেন শুচিবাই রোগে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এ রোগের নাম 'অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার' বা 'ওসিডি'। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠারই ভিন্ন রকম বহিঃপ্রকাশের নাম 'ওসিডি'। এ রোগে আক্রান্তরা বারবারই বাজে চিন্তায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও একই কাজ করে যান বারবার। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সিমা হিঙ্গোরানি বলেন, 'এই রোগের উপসর্গ মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে। তীব্র মাত্রায় শুচিবায়ের শিকার কেউ যদি চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হন তবে তার ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও দক্ষতা অনেকখানি কমে যেতে পারে। শিক্ষাঙ্গন, কর্মক্ষেত্র কিংবা বাড়িতে কাজের ৰেত্রে এর বড় প্রভাব পড়তে পারে।'

শুচিবাই বা ওসিডিতে আক্রান্ত মানুষরা সবসময় নিজের পোশাক পরিচ্ছদের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে চিন্তিত থাকে। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নিয়ে বাড়াবাড়ি বাতিকের পর্যায়ে চলে যায়। এরা ঘন ঘন হাত ধোয়, গোসল করে তবু ময়লা এবং জীবাণুর ভয়ে ভীত থাকে। মোট কথা সদা সতর্ক অবস্থায় থাকে এ ধরনের মানুষ। অনেকের দাম্পত্য জীবনেও এ নিয়ে অশানত্দি দেখা দেয়। একান্ত ঘনিষ্ঠতার সময় এমন রোগে আক্রান্ত স্বামী বা স্ত্রী স্বস্তিবোধ করে না। শয়নকক্ষের দরজা ঠিকভাবে আটকানো হয়েছে কী-না অথবা কেউ তাদের দেখছে কী-না এমন অদ্ভুত দুশ্চিন্তা কাজ করে তাদের মধ্যে। ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো ও অন্যকে আঘাত করার ভয়ে সবসময় ভীত থাকে। তারা নিয়মভঙ্গ হয় কী-না সে দুশ্চিন্তাও সব সময় নিজের মধ্যে বহন করে। কোনো একটা স্থানের বা নিজের বাড়ির কোনো কৰের সাজসজ্জা একটু এলোমেলো দেখলেই অসহায় বোধ করে এরা। ঠিকমত নেভানো হয়েছে কী-না এই বিষয়গুলো তাদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলে।

ঘন ঘন হাত ধোয়া ও দীর্ঘসময় ধরে গোসল করা শুচিবাই বা ওসিডির লৰণ। এরা নিজের কাজকে নিখুঁত করার চেষ্টা করে এবং বারবার অসম্পাদিত কাজের তালিকা তৈরি করে। মাঝে মাঝে একই লেখা বারবার পড়ে কোনো কারণ ছাড়াই। কাউকে কাউকে অতিরিক্ত ধর্মকর্ম বা পূজা-আর্চাও করতে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড. বসন্ত মানদ্রা বলেন, 'এই রোগে আক্রান্ত মানুষজন আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া এরা সব সময়ই নিজের কোনো জটিল রোগ হয়েছে এমনটা ভেবে আতংকে আচ্ছন্ন থাকে।'

ড. জয়তি সাঙ্গেল বলেন, বেকারত্বজনিত মনোদৈহিক চাপ বা স্ট্রেস, কর্মক্ষোত্রে অসাফল্য, সম্পর্কের জটিলতা, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং সনত্দান জন্মদান সংক্রান্ত কারণে শুচিবাই বা ওসিডি বেড়ে যেতে পারে।

শুচিবাইয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত আচরণগত চিকিৎসার মাধ্যমে ওসিডি নিরাময় করা হয়। তাদের সমস্যা অন্য কেউ শুনছে বা ভাগ করে নিচ্ছে এটা বুঝতে পারলে মানসিক বিকার কমে আসবে। নিয়মিত কাউন্সিলিঙের মাধ্যমে এই রোগ ভালো হয়।


দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া অবলম্বনে

হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে মেনে চলুন ১০টি পরামর্শ

সুস্থ সবল হৃৎপিণ্ড দীর্ঘ জীবনের চাবিকাঠি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ দ্রুত নাগরিক জীবনে বাড়ছে কাজের চাপ ও স্ট্রেস। পাশাপাশি ফাস্টফুড বা দ্রুত খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সিংহভাগ মানুষ। গবেষকরা বলছেন ক্রমাগত স্ট্রেসের মধ্যে থাকলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপের মত শারীরিক উপসর্গ। বর্তমানে তরুণরাও উল্লেখযোগ্য হারে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে স্ট্রেসের পরিমাণ কমানো, ধূমপান ত্যাগ, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। সুস্থ হৃৎপিণ্ডের জন্য ১০টি পরামর্শ মেনে চলার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। এগুলো হল-

ধূমপান ত্যাগ : ধূমপান ১৫ থেকে ২৫ বছর আয়ু কমিয়ে দেয়। যদি কেউ ধূমপায়ী হয় তবে তার হার্ট এটাকের আশংকা অধূমপায়ীর তুলনায় দ্বিগুণ। তবে যখন থেকেই ধূমপানের অভ্যাস কেউ ত্যাগ করবে তখন থেকেই হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যাবে অনেকাংশে।

লবণ কম খাওয়ার অভ্যাস : লবণ রক্তচাপ বাড়ায়। তাই খাবারের সঙ্গে বাড়তি লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে দ্রুত।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস : সুস্থ হৃৎপিণ্ডের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। মাছ, ফল-মূল ও শাক-সব্জি বেশি পরিমাণ খেতে হবে। খুব বেশি শর্করা ও মাংস জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।

মদ্যপান নিষেধ : খুব বেশি মদ্যপান করলে হৃদপেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এছাড়া নিয়মিত মদ্যপানে ওজন বাড়ে ও রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। তাই সুস্থ হৃৎপিণ্ডের জন্য মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।

সক্রিয় থাকুন : ব্যায়াম করম্নন কিংবা শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কাজ করুন প্রতিদিন। সচল ও সক্রিয় না থাকলে শরীরের বিপাক ক্রিয়ার গতি মন্থর হয়ে যায়। ঝুঁকি বাড়ে হৃদরোগের।

রক্তচাপ, রক্তশর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেৰণ করতে হবে।

সুস্থ আছেন কী-না সেটা জানাও জরুরি। হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রসত্দ হওয়ার আগে রক্তচাপ, রক্তশর্করা বা বস্নাড সুগার ও কোলেস্টেরলের মাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। এসব শারীরিক অবস্থা তাই সব সময় পর্যবেৰণ করতে হবে। নিয়মিত চেকআপ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

কোমরের চর্বি কমান : কোমরের মাপ বড় হলে এর চারপাশে চর্বির স্তর পড়লে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই কোমর সরু রাখা জরুরি।

স্ট্রেস কমান : আপনি যখন খুব ব্যস্ত থাকেন তখন নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া না হলেও ধূমপানের পরিমাণ হয়ত বেড়ে যায়। এটা চরম স্ট্রেসের লক্ষণ। স্ট্রেস কমাতে নিয়মিত ৮ ঘণ্টা ঘুম ও যোগ ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

পারিবারিক ইতিহাস জানুন : আপনার পরিবারে যদি হৃদরোগের ইতিহাস থাকে, যদি বাবা মায়ের এই রোগ থেকে থাকে তবে আপনারও এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কাজেই অন্যদের তুলনায় আপনাকে অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে।

হাসুন : হাসি হলো মহৌষধ। হাসতে পারা ও হাসির উপলৰ তৈরি করা জরম্নরি। এতে মন হালকা হয়। স্ট্রেস কমে।


দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া অবলম্বনে

হৃদরোগ ও বিষণ্নতা এক হলে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায় বহুগুণ

হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি সাধারণের তুলনায় বহুগুণ বেশি। কিন্তু এর সঙ্গে যদি বিষণ্নতা যুক্ত হয় তবে মৃতু্যঝুঁকি বেড়ে যায় আরো কয়েকগুণ। সম্প্রতি বেশ কয়েক বছর ধরে ব্রিটিশ ও ফরাসি গবেষকরা প্রায় ৬ হাজার মানুষের উপর গবেষণা চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছেন। গবেষকদের মতে, কেবলমাত্র হৃদরোগে আক্রান্তদের তুলনায় হৃদরোগ ও বিষণ্নতা উভয় রোগে আক্রানত্দদের মৃত্যুঝুঁকি ৪ গুণ বেশি। 'হার্ট জার্নাল' নামের একটি চিকিৎসা সাময়িকীতে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে গবেষকরা প্রায় ৬ হাজার মধ্যবয়স্ক মানুষের ওপর পাঁচ বছর ধরে সমীক্ষা চালিয়েছেন।

'ব্রিটিশ হোয়াইট হল স্টাডির' অধীনে দু'দেশের গবেষকরা এই গবেষণায় অংশ নেন। স্বাস্থ্যের উপর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবকগুলোর প্রতিক্রিয়া জানতে ব্রিটিশ সরকার এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ ও ফ্রান্সের ভার্সাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই গবেষণায় অংশ নেন। প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে চলা এই গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যারা অংশ নিয়েছেন তারা প্রধানত মধ্যবয়সী সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ছিলেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা হৃদরোগে আক্রান্ত তারা সুস্থ মানুষের তুলনায় ৬৭ ভাগ বেশি মৃত্যুঝুঁকিতে থাকেন। কিন্তু এর সঙ্গে যদি বিষণ্নতা যুক্ত হয় তবে মৃত্যুঝুঁকির হার তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের সিনিয়র নার্স এমি হমসন বলেন, 'ইতোপূর্বে বিষণ্নতার সাথে হৃদরোগের সম্পর্ক নিয়ে যে গবেষণা হয়েছিল এই গবেষণা তারই ধারাবাহিকতায় হয়েছে। বিষণ্নতার সাথে এমনিতেই হৃদরোগের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু যদি উভয়রোগের সম্মিলন ঘটে কারো মধ্যে তবে মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।'

এ ধরনের মারাত্মক পরিস্থিতি এড়াতে হলে প্রথমেই নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। বিষণ্নতাকে অবহেলা না করে দ্রম্নত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন তারা। নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও ইতিবাচক ভাবনা পাল্টে দিতে পারে জীবনধারা। চিকিৎসকের পরারর্শ মেনে হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে এমন জীবনাভ্যাস রপ্ত করতে পারলে মৃত্যুঝুঁকি অনেকগুণ কমে যাবে বলে মনে করেন তারা।

মেদ কমানোর জন্য রাতের খাবার বাদ দেয়া যাবে না

যারা মেদ কামানোর জন্য রাতের খাবার ছেড়ে দিয়েছেন তারা নিজেদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছেন। সম্প্রতি এক গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা বলেছেন, রাতে ঘুমানোর আগে হালকা কিছু খেয়ে নেয়া ভালো। গবেষকরা বলছেন- সকালের নাস্তা যদি রাজার মতও হয় তবু রাতে কিছু না কিছু খেতে হবে। ঘুমানোর আগে কার্বহাইড্রেট ও প্রোটিন সমৃদ্ধ হালকা খাবার খেলে ওজন কমে এবং শরীরও ভালো থাকে বলে মনে করছেন তারা। তারা নাস্তা হিসেবে রাতের খাবারকে দেখতে বলেছেন। দই, কম চর্বিযুক্ত পনির, সিরিয়াল ও ফল রাখা যেতে পারে রাতের খাবারের তালিকায়। রাতে শর্করা বা কার্বহাইড্রেট খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে ও ওজন কমে।

ফিটনেস এক্সপার্টদের মতে, আমাদের খাদ্যের ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ হওয়া উচিত শর্করা। কারণ শরীরের প্রধান শক্তির উৎস এটাই। শর্করা সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে বিশেষ করে শাক-সবজি ও ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও আঁশ জাতীয় উপাদান। গবেষকদের মতে, দানা শস্য, শিম, ফল এবং শাক-সবজি খুব ধীরে রক্তে শর্করা ছড়ায়। ফলে রক্ত-শর্করা বা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে বহুক্ষণ। ভারতীয় পুষ্টিবিদ রিতিকা সামাদ্দার বলেন, 'স্বাস্থ্যকর খাবারে আমিষ এবং শর্করা যথাযথ পরিমাণে থাকে। শুধু সালাদ কিংবা সু্যপ আদর্শ খাবার হতে পারে না। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ ও ভিটামিন এতে থাকে না।' তিনি বলেন, 'সু্যপ দিয়ে খাবার শুরু করুন, তারপর ফিরে যান প্রতিদিনকার নিয়মিত খাদ্য তালিকায়।' প্রক্রিয়াজাত বা তৈরি খাবার স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এ ধরনের খাবার বস্নাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে শরীরে ক্লান্তি ও ক্ষুধা বোধ হয়।

সম্প্রতি আমেরিকান জার্নাল অফ মেটাবলিজম সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেছে, যে কোনো এক বেলার খাবার না খেয়ে অন্য কোনো সময় এক সাথে বেশি খেলে হজমে সমস্যা হয় এবং ইনসুলিন ঠিক মত কাজ করে না। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

গবেষকদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যত বেলা বাড়তে থাকে ততই শরীরের বিপাক ক্রিয়ার গতি মন্থর হতে থাকে। তাই রাতের খাবারে আদর্শ সময় হল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত আটটা। খাওয়ার পর পরই ঘুমানো ভালো নয়। এতে শরীর অত্যধিক মেদ সঞ্চয় করে।

যারা মেদ কমানোর জন্য লড়ছেন তাদের জন্য আদর্শ রতের খাবার হতে পারে, চাপাতি বা রুটি, ডাল , সবজি। এছাড়া শিমের তৈরি খাবার ও সু্যপও থাকতে পারে সাথে।


দ্য টইমস অফ ইন্ডিয়া অবলম্বনে

ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি কমায় চা ও কফি


অতিরিক্ত চা বা কফিপায়ীদের জন্য সুখবর। যারা নিয়মিত চা ও কফি পান করেন তাদের মস্তিষ্কে টিউমার হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় কম। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই তথ্য জানা গেছে। পাঁচ লৰাধিক প্রাপ্তবয়স্ক ইউরোপীয় নাগরিকের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৮০ ভাগ ৰেত্রে যে ধরনের ব্রেন টিউমার হয় মানব মস্তিষ্কে সেরকম ব্রেন টিউমারে ঝুঁকি চা ও কফি কমিয়ে দেয়। গ্লিওমাস নামের এ ধরনের ব্রেন টিউমারেই মানুষ আক্রান্ত হয় বেশি। কিন্তু চা ও কফি নিয়মিত পান করলে গ্লিওমাস টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। তবে এই গবেষণা এটা প্রমাণ করে না যে, পানীয় দু'টোর অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে বা এসব পান করলে ব্রেন টিউমারের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ তৈরি হবে। লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের গবেষক ডমিনিখ মিখাউদ বলেন, 'এটা খুব প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণা তাই এই গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কেউ চা ও কফিতে আসক্ত হয়ে উঠলে ভুল হবে।' গবেষকদের মতে, চা ও কফির প্রভাব যদি ব্রেন টিউমারের উপর থাকেও তবে তা অতি নগণ্য। ইউরোপে ব্রেন টিউমারে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম। প্রতি এক লাখ ইউরোপবাসীর মধ্যে চার থেকে ছয়জন নারী এবং ছয় থেকে আটজন পুরুষ ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়। সব মিলিয়ে একজন ইউরোপবাসীর ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এক শতাংশেরও কম। তবে তারপরও যারা খুব বেশি পরিমাণ কফি ও চা পান করেন তাদের ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি কমে যায় বলে জানিয়েছেন গবেষক ডমিনিখ। তিনি বলেন, 'ঠিক কী কারণে ব্রেন ক্যান্সার হয় আমরা জানি না তাই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলাও সম্ভব হয়নি।

আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন নামের গবেষণা সাময়িকীতে এই সংক্রান্ত নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। ৫ লৰ ২১ হাজার ৪৮৮ জন নারী এবং পুরুষের উপর গবেষণা চালিয়ে চা ও কফির নতুন গুণ সম্পর্কে গবেষকরা জানতে পেরেছেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বয়স ছিল ২৫ থেকে ৭০ বছর। এর মধ্যে চার লৰ ১০ হাজার নারী-পুরুষ ক্যান্সার মুক্ত ছিলেন। প্রায় সাড়ে আট বছর পর ৩৪৩ জন নারী-পুরুষের ব্রেন টিউমার ধরা পড়েছিল। গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের চা ও কফি পানের অভ্যাসের উপর ভিত্তি করে চার থেকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা করেছিলেন। এদের মধ্যে যে দলের সদস্যরা সবচেয়ে বেশি চা ও কফি পান করেছেন তাদের মস্তিষ্কে ক্যান্সার হয়নি। অপরদিকে ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চা, কফি ইত্যাদি পানীয় পানের অভ্যাস তেমন ছিল না।


রয়টার্স অবলম্বনে

পেট ও কোমরের মেদ কমাবে যেসব খাদ্য

পেট ও কোমরের চতুর্দিকে জমে ওঠা মেদ কমাতে অনেকেই দিনের পর দিন উপোস থাকেন। কঠিন ডায়েটের সাথে ব্যায়ামও করেন কেউ কেউ। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে কোমর ও পেটের মেদ কমাতে গিয়ে নিজেকে অভুক্ত না রাখলেও চলে। যথাযথ নিয়ম মেনে সঠিক খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করলে উধাও হবে অনাকাঙ্কিত মেদ। পুষ্টিবিদরা বলছেন, কেবল নির্ভেজাল শর্করা অর্থাৎ ভাত, আলু, ময়দার রুটি ইত্যাদি খাদ্য তালিকা থেকে কমিয়ে সবুজ শাকসবজি ও আমিষ জাতীয় খাদ্য খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। শর্করা বা চর্বি জাতীয় খাবার হজম করতে শরীরের শক্তি কম খরচ হয়। অপরদিকে আমিষ জাতীয় খাবার হজম করতে শরীরের শক্তি খরচ হয় বেশি। ফলে আমিষ বা প্রোটিন খেলে শরীরে জমে থাকা চর্বি কমে যায়। কারণ এই চর্বি শরীরকে শক্তি বা ক্যালরির যোগান দেয়। পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা কোমর ও পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে এমন খাবারের একটি তালিকাও প্রকাশ করেছেন। তালিকাটি পাঠকের সুবিধার্থে তুলে ধরা হল -

ডিম : আমিষ বা প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিমে রয়েছে অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি-১২। এই সসত্দা ও উপাদেয়া খাবারটি পেট ও কোমরের চর্বির ব্যূহে আঘাত করতে সক্ষম। যারা ডিমের কোলেস্টেরল নিয়ে ভয় করেন তাদের প্রতি চিকিৎসকদের বক্তব্য হল, এই কোলেস্টেরল খুব বেশি মাত্রায় ক্ষতিকর নয়। তারপরও যারা অতি সংবেদনশীল তারা ডিমের কুসুম না খেয়ে। সাদা অংশ খেতে পারেন।

কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার :

সম্প্রতি স্থূলতা বিষয়ক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যেসব নারী নিয়মিত দিনে ৩ থেকে ৪ বার ননীবিহীন দুধ ও চর্বিহীন দই খেয়ে থাকেন তারা নিয়মিত ডায়েট করেন এমন নারীদের তুলনায় ৭০ ভাগ বেশি মেদ কমাতে সৰম হন। চর্বি বা ননীবিহীন দুগ্ধজাত খাবার শরীরে বাড়তি ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে যা দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্যেরও সুরক্ষা দেয়।

শিম জাতীয় খাবার : সব ধরনের শিম জাতীয় খাবারে রয়েছে প্রচুর আমিষ, আঁশ ও লৌহ। শিম ও সয়াবিন রান্না করে সবজি হিসেবে খেলে শরীরের অনাবশ্যক চর্বি কমবে।

যব বা ওটমিল : আজকাল শিশুখাদ্য হিসেবে যব বা ওটমিলের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এর কারণ হল যবে রয়েছে প্রচুর আঁশ। এইগুলো শরীরের খারাপ ও দূষিত জিনিষকে বের করে দেয়, পরিপাক যন্ত্র সবল করে এবং মেদ কমায়। যব সেদ্ধ করে মধু ও ননী বিহীন দুধ সহযোগে খাওয়া যায় সকালের নাসত্দার সাথে। এটি শরীরের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে এবং বহুক্ষণ ধরে শক্তি যোগায়।

জলপাই তেল বা অলিভ অয়েল:

কিছু কিছু চর্বি আছে যা শরীরের জন্য ভালো। এ ধরনের চর্বির নাম মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট। জলপাই তেলে এমন উপকারী চর্বি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এ ধরনের চর্বি শরীরের পৰে ৰতিকর চর্বি কমায় এবং হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখে।

অপরিশোধিত শস্য বা হোল গ্রেইন : আটা, ঢেঁকিছাঁটা চাল এসব অপরিশোধিত শস্যে রয়েছে প্রচুর আঁশ এবং খনিজ উপাদান। ময়দার পাউরুটি ও রুটি না খেয়ে লাল আটার রুটি ও পাউরম্নটি খেলে মেদ কমে। তাছাড়া মেশিনে পরিশোধিত সাদা চালের ভাত না খেয়ে ঢেঁকিছাঁটা লাল চালের ভাত বেশি পুষ্টিকর। এ ধরনের ভাতে রয়েছে খনিজ উপাদান এবং প্রোটিন। বিশুদ্ধ শর্করা না খেয়ে এমন অপরিশোধিত শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।

মাছ ও মাংস : মুরগি, গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি প্রাণীর মাংসে প্রচুর আমিষ রয়েছে। কিন্তু ভাজা মাংস শরীরের জন্য হিতকর নয়। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ রান্না মাংস খেলে আমিষের ঘাটতি কেটে যায় এবং মেদও কমে, সামুদ্রিক মাছও হতে পারে আমিষের ভালো উৎস। এ ধরনের মাছে উপকারি চর্বি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে। মাছ মেদ কমায়, বিষন্নতা দূর করে, হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখে।


দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া অবলম্বনে

তেলাপোকার গুণ

নোংরা চেহারা ও ভীতিকর গঠনের কারণে তেলাপোকার বিশেষ বদনাম রয়েছে। বিশেষ করে তেলাপোকা দর্শনমাত্র গিনি্নদের কানফাটানো চিৎকার ছোট্ট এ প্রাণীকে অচ্ছুত করে রেখেছে সবখানে। তবে এবার জানা গেছে, নোংরা ও কুৎসিত এ প্রাণীটিও মানুষের অভাবিত উপকারে আসতে পারে। এদের শরীরে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যা মানুষের শরীরে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ ঠেকাতে বেশ কার্যকর।

যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানিয়েছেন, তেলাপোকার মস্তিষ্কের কোষে ৯ ধরনের রাসায়নিক অণু পাওয়া গেছে, যা মানুষের শরীরে ই-কোলাই এবং এ ধরনের অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম। গবেষক দলের সদস্য সাইমন লি জানিয়েছেন, তেলাপোকার মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের কোষ মানবদেহের কোনো ক্ষতিসাধন করা ছাড়াই বেশ কিছু ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সারিয়ে তুলতে সক্ষম। সাইমন লি সোসাইটি ফর
জেনারেল মাইক্রোবায়োলজির শরৎকালীন সম্মেলনে এ গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করবেন।
গবেষকরা জানিয়েছেন, তেলাপোকার শরীরের উপাদানগুলো কাজে লাগিয়ে নতুন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবন করা যেতে পারে। বর্তমানে প্রচলিত ওষুধের বেশির ভাগই তীব্র সংক্রমণের বিরুদ্ধে তেমন একটা কার্যকর নয়। এ ছাড়া প্রচলিত ওষুধের অধিকাংশই মানুষের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে। কিন্তু তেলাপোকা থেকে পাওয়া উপাদান বেশ কার্যকর এবং সেগুলো দিয়ে একেবারেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন ওষুধ তৈরি করা সম্ভব। সূত্র : টেলিগ্রাফ অনলাইন।

অপর্যাপ্ত ঘুম মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ

যেসব তরুণ দৈনিক পাঁচ ঘণ্টার কম সময় ঘুমান তাদের মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ১৭ থেকে ২৪ বছর বয়সী ২০ হাজার অস্ট্রেলীয় নাগরিকের উপর জরিপ চালিয়ে এই তথ্য জানা গেছে। জর্জ ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই জরিপ চালায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পাঁচ ঘণ্টা অথবা তার কম সময় ঘুমান তারা ৮ ও ৯ ঘণ্টা ব্যাপী ঘুমানো মানুষজনের তুলনায় ৩ গুণ বেশি মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। 'পি' নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়, যারা পর্যাপ্ত ঘুম থেকে বঞ্চিত হন তারা মানসিক রোগ ছাড়াও হৃদরোগ ও মুটিয়ে যাবার ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। এই গবেষণার প্রধান গবেষক অধ্যাপক লিক গ্লোজিয়ের বলেন, 'একজন তরুণের আদর্শ ঘুমের সময় হচ্ছে দৈনিক ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা।' তবে গত কয়েক দশকে তরুণদের ঘুমের সময়কাল অনেক কমে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে নানা ধরনের বিনোদন মাধ্যম ও ডিজিটাল সামগ্রীকে তিনি এর জন্য দায়ী করেছেন। রাত জেগে টেলিভিশন দেখা, ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া তরুণরা ঘুম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু স্কুল, কলেজ ও অফিসের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বিছানাও ছাড়তে হচ্ছে তাদের। ফলে ঘুম পর্যাপ্ত হচ্ছে না বেশিরভাগ তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের। এমন কী যারা ছয় ঘণ্টার কম ঘুমান তাদের স্বাস্থ্যও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ধরনের মানুষজন পূর্ণসময় ধরে ঘুমানো মানুষের তুলনায় অধিক মানসিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। ফলে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, দক্ষতা হ্রাস পায় এবং স্ট্রেস বেড়ে যায় মাত্রাতিরিক্ত।


ঘুম বঞ্চিত মানুষের মধ্যে বিষণ্নতাজনিত রোগ 'মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার' বা 'বাইপোলার ডিসঅর্ডার' দেখা দেয়। এ ধরনের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়ার পূর্বেই পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করেন গ্লোজিয়ের। তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে বিষণ্নতা, মাদকাসক্তি, অপরাধ প্রবণতা ও আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষজন নিরাময়হীন স্ট্রেসের শিকার হতে পারে। যার ফলে দেখা দিতে পারে হৃদরোগ ও স্থূলতা। এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত হতে রাত জেগে অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখার অভ্যাস ত্যাগ করা এবং ইন্টারনেট, মোবাইল ইত্যাদি ডিজিটাল সামগ্রী রাতে ঘুমানোর সময় বন্ধ রাখা জরুরি। পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় কম পান করারও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। পর্যাপ্ত ঘুম ঝরঝরে স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থা নিশ্চিত করে। তাই দৈনিক ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানোর বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন গবেষকরা।


এবিসি নিউজ অনলাইন অবলম্বনে

শিক্ষণ ও স্মৃতি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে স্বপ্ন

ঘুমের ঘোরে দেখা স্বপ্নের কথা মানুষ মনে করতে পারুক বা না পারুক মসত্দিষ্কের স্মৃতি সংরৰণে ও নতুন কিছু শেখার ৰেত্রে স্বপ্নের গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্বপ্ন হতে পারে ভয়ের, সুখের, কাম উত্তেজনার কিংবা অস্বস্তিকর। বিখ্যাত মনোবিদ সিগমুন্ড ফ্রয়েড বলেছেন, স্বপ্ন হল সচেতন মনের প্রতি অচেতন মনের বার্তা।

প্রশ্ন উঠেছে স্বপ্ন কী নিছকই মস্তিষ্কের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ? না-কি এর সত্যি উপকারী দিক রয়েছে। ইদানিং বহু গবেষক বলছেন, স্বপ্ন নতুন ভাবনার জন্ম দেয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন আমরা নতুন যা কিছু শিখছি তাকে সুবিন্যস্ত করে। স্বপ্ন নিয়ে ফয়েডের মনোসমীক্ষণ ও ব্যাখ্যার পর প্রায় এক শতাব্দি কেটে গেছে। তবু স্বপ্ন রহস্যের পুরো সমাধান এখনো পাওয়া যায়নি। গবেষকরা জানিয়েছেন, স্বপ্ন যতই তীব্র ও দীর্ঘ সময়েরই হোক না কেন মানুষ তার খুব অল্প অংশই স্মরণ রাখতে পারে। অনেকে একেবারেই তা ভুলে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে মানুষ স্বপ্নের কথা মনে করতে পারুক বা না পারুক স্মৃতি ও শিক্ষণো তার ভূমিকা রয়েছে।

গবেষকদের মতে মানুষের ঘুমের তিনটি পর্যায় রয়েছে। হালকা, গাঢ় ও গভীর- সাধারণভাবে এই তিনটি সত্দরে ভাগ করা যায় ঘুমকে। হালকা স্তরের নাম বিজ্ঞানের ভাষায় রেম বা র্যাপিড আই মুভমেন্ট। এ সময় চোখের পাতার নিচে অক্ষিগোলক কাঁপতে থাকে এবং মস্তিষ্কের বেশিরভাগ অংশ সজাগ হয়ে ওঠে। একজন মানুষের ঘুমের শতকরা ২০ ভাগ হল রেম পর্যায়ের ঘুম। বেশির ভাগ স্বপ্ন আমরা এ সময়ই দেখি। এ সময় দেখা স্বপ্ন দীর্ঘস্থায়ী ও দৃশ্যময় হয়। রেম পর্যায়ে দেখা স্বপ্ন আমাদের কিছুটা হলেও মনে পড়ে। কিন্তু গভীর ঘুম বা ওয়েভ ঘুমের সময় দেখা স্বপ্ন মনে করা কঠিন। বস্টনে অবস্থিত হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষক রবার্ট স্টিকগোল্ড বলেন, 'রেম ঘুমে দেখা স্বপ্ন আবেগের সঞ্চার করে আমাদের মনে। এছাড়া এই পর্যায়ে স্বপ্ন দেখার সময় জাগ্রত অবস্থার চাইতেও মস্তিস্ক বেশি সচল থাকে। ফলে আমরা সহজেই স্মৃতি, আবেগ ইত্যাদি সঞ্চয় করতে পারি মস্তিষ্কের ভেতর।' অপর দিকে গভীর ঘুমে দেখা স্বপ্ন আমরা তেমন মনে করতে পারি না বলে জানিয়েছেন তিনি।

স্বপ্ন দেখার সময় মসত্দিষ্কের একটি অংশ অপর একটি অংশের কাছে অর্জিত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এবং তাকে স্মৃতিতে পরিণত করে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক জোনাথন উইনসন। তিনি বলেন, 'মস্তিষ্কের 'হিপ্পোক্যাম্পাস' দিনের অর্জিত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে 'নিউকর্টেক্সের' কাছে। এভাবে অভিজ্ঞতাকে শিক্ষায় পরিণত করতে সাহায্য করে স্বপ্ন। নিউরোসায়েন্টিস্ট ও মলিকু্যলার বায়োলজিস্ট ফ্রাঙ্কিস ফ্রিক বলেন, 'আমরা স্বপ্নের মাধ্যমে যেমন গুরম্নত্বপূর্ণ স্মৃতি ফিরে পাই ঠিক তেমনটি বেদরকারী ও অস্বস্তিকর স্মৃতিকেও ঝেটিয়ে বিদায় করি।' স্বপ্ন কী করে আমাদের অজান্তেই একটি স্মৃতিকে জাগ্রহ করে তার উদাহরণও দিয়েছেন গবেষকরা। হার্ভার্ডের গবেষক স্টিকগোল্ডের মতে, জাগ্রত অবস্থায় মস্তিষ্ক যে সমস্যার সমাধান করতে পারে না স্বপ্ন তা অনেক সময় করে দেখায়। তিনি বলেন, 'অনেক সময় এমন হয় যে আপনি কোনো ব্যক্তির নাম ভুলে গেলেন। সারা দিনেও তা মনে পড়লো না। বিষয়টি মাথার মধ্যে সেভাবেই রয়ে গেল দিনভর। কিন্তু রাতে স্বপ্নের সময় মস্তিষ্কের অতি সক্রিয় অবস্থা ঠিক স্মৃতি থেকে খুঁজে বের করবে সেই নাম। যা সকালে ঘুম ভেঙে আপনার মনে পড়ে যেতে পারে।'


এবিসি সায়েন্স নিউজ অনলাইন

ওজন নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারার কয়েকটি প্রধান কারণ

অব্যাহত ডায়েটিং করার পরও ওজন কমাতে পারছেন না অনেকেই। সম্প্রতি গবেষকরা ওজন কমানো কঠিন হয়ে ওঠার পেছনে কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন। এসব বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠতে পারলে ওজন কমানোর লড়াই অনেকটা সহজ হয়ে উঠবে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। ওজন নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারার কারণগুলো হল-

স্বল্প নিদ্রা বা ঘুমের সমস্যা : ব্যস্ত নাগরিক জীবন ঘুম কেড়ে নিচ্ছে নাগরিকদের চোখ থেকে। স্বল্প নিদ্রা নগরজীবনের একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুস্থ জীবন যাপনের জন্য দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন একজন মানুষের। কিন্তু এমন সময় ধরে ঘুমাতে পারেন অল্প ক'জনই। ঘুম অসমাপ্ত রেখে যারা বিছানা ছাড়েন তাদের শরীরে স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে। শরীর এই অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য দ্রুত মেদ সঞ্চয় করতে থাকে। ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে মুটিয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রবল। নিয়মিত ৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম ওজন বাড়ানোর সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। কম ঘুমের কারণে অনাবশ্যক ক্লান্ত দেখা দেয়। ফলে শরীরে শক্তির চাহিদা বেড়ে যায়। শক্তির এই চাহিদা পূরণে শরীর বাড়তি ক্যালরি সঞ্চয় করে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

স্ট্রেস : দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস বা মনোদৈহিক চাপ শরীরের বিপাকক্রিয়ার গতি মন্থর করে তোলে। ফলে দৈনিক খাদ্য তালিকায় ক্যালরি না বাড়লেও মন্থর বিপাকক্রিয়ার কারণে মেদ সঞ্চয় হতে থাকে। এমন মেদ সঞ্চিত হয় কোমরের চারপাশে। ফলে কোমরের চারপাশে হুট করে বাড়তি মেদ সঞ্চয় হতে থাকলে সতর্ক হতে হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে নিজের স্ট্রেসের পরিমাণ কমানোর কথা ভাবতে হবে। প্রথমেই স্ট্রেসের উৎস চিহ্নিত করে তারপর স্ট্রেস নির্মূলের কাজ শুরু করতে হবে। স্ট্রেস কমাতে না পারলে ডায়েটিং করেও ফল পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

ওষুধ : এমন কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ওজন বেড়ে যায়। বিষণ্নতাবিরোধী ওষুধ, মাইগ্রেন কমানো ওষুধ এবং কিছু কিছু উচ্চ রক্তচাপবিরোধী ওষুধ ওজন বাড়িয়ে দেয় বলে জানা গেছে। এসব ওষুধ সেবনের পর রুচি বেড়ে যায় যার কারণে ওজন বাড়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ কোন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে ওজন বাড়ছে তা সেবনকারীর পক্ষে জানা সম্ভব নয়।

স্বাস্থ্যগত কারণ : অনেক সময় শারীরিক কিছু সমস্যা বা অবস্থার কারণেও ওজন বাড়তে পারে। শরীরে থায়রয়েড হরমোনের ঘাটতি দেখা দিলে ওজন বাড়তে পারে। এ ধরনের সমস্যাকে হাইপো-থায়রয়েডিজম বলা হয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়। এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে রুচি কমে যায়, ঘুমের মাত্রা বেড়ে যায় এবং শরীরের বিপাকক্রিয়ার গতি অত্যন্ত মন্থর হয়ে পড়ে। ফলে ওজন বাড়তে থাকে দ্রুত। হাইপো-থায়রয়েডিজমের কারণে যাদের ওজন বাড়ছে তারা দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে যথাযথ চিকিৎসা নিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণে আসবে। বাড়তি ওজনের সমস্যাও মোকাবিলা সহজ হবে।

দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া অবলম্বনে

ওষুধ ছাড়াই বিষণ্নতা দূর করা সম্ভব

বিশ্বজুড়ে বিষণ্নতায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে। প্রতিযোগিতামূলক আধুনিক বিশ্বে কর্মব্যস্ততার চাপ কেড়ে নিয়েছে মানুষের প্রাণচাঞ্চল্য ও মুখের হাসি। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তনই বিষণ্নতা রোগের মূল কারণ। যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যার ২০ থেকে ৩০ ভাগ পূর্ণবয়স্ক মানুষই বিষণ্নতার শিকার। গত কয়েক দশক পূর্বে এই রোগে আক্রান্তের হার ছিল অর্ধেকের মত। যুক্তরাষ্ট্রের কনসাস শহরে বসবাসকারী মনোবিদ ড. স্টিভ ইলার্ডি বিষণ্নতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। বিষণ্নতার উপসর্গকে মানবমস্তিষ্ক শারীরিক ব্যথা বেদনা বা প্রদাহ বলে ভুল করে। ইলার্ডির মতে তখন মানুষ নিজেকে পরিপার্শ্ব থেকে গুটিয়ে নেয় এবং একা থাকতে চায়। এতে আরো প্রকট হয় বিষণ্নতার উপসর্গ। তার মতে, বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তির উচিত অধিকহারে মানুষের সাথে মেলামেশা করা। ইলার্ডি বলেন, 'অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিষণ্নতার রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ মত ওষুধ সেবন করেন এবং কোনো উপকার পান না। ক্ষেত্র বিশেষে রোগটা আরো তীব্র আকারে ফিরে আসে। তাছাড়া যৌন অক্ষমতা, আবেগের ভারসাম্যহীনতা এবং ওজন বাড়ার মত মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে বিষণ্নতা বিরোধী ওষুধের।' ওষুধ ছাড়াই জীবন-যাপন এবং চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এনে বিষণ্নতা দূর করা শ্রেয় বলে মনে করেন তিনি।


কনসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইলার্ডি ওষুধ ছাড়াই বিষণ্নতা দূর করার একটি চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। থ্যারাপিউটিক লাইফ স্টাইল চেঞ্জ বা টিএলসি নামের এই চিকিৎসাপদ্ধতিতে জীবন-যাপনের ধারা পাল্টানোর মাধ্যমে বিষণ্নতা দূর করা হয়। বিষন্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রথমেই তিনি এর মূল কারণ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেন। তার মতে বিষণ্নতার আসল কারণ লুকিয়ে আছে আমাদের জীবন-যাপনের মধ্যে। তিনি বলেন, 'আমাদের জীবনযাপনের মান অতি দ্রম্নত উন্নত হয়েছে প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে। কিন্তু সেই সাথে জীবনে তৈরি হয়েছে কিছু চোরাবালির। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে গৃহাভ্যন্তরের জীব নয়। পাশাপাশি তাকে পেশার স্বার্থে সামাজিক যোগাযোগ ছাড়তে হচ্ছে। ঘুম কমাতে হচ্ছে এবং একটা নিরানন্দ জীবনের ঘানি টেনে যেতে হচ্ছে। তাই বিষণ্নতা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।'

ড. স্টিভ ইলার্ডি তার সম্প্রতি প্রকাশিত বইতে উলেস্নখ করেছেন, পৃথিবীর পরিবেশ ও মানুষের সভ্যতা যেভাবে দ্রুত পাল্টে গেছে তার সঙ্গে মানবদেহ পালস্না দিয়ে বদলায়নি। গত ১২ হাজার বছরে মানুষের শরীরে এক ইঞ্চিও পরিবর্তন সাধিত হয়নি। তিনি বলেন ,'জৈবিকভাবে আমাদের দেহ এখনো প্রস্তরযুগের সংগ্রামমুখর সময়ের মধ্যেই আটকে আছে। এই আদিম দেহ যখনই আধুনিক পরিবেশের ভেতরে প্রবেশ করেছে তখন থেকেই বিষণ্নতার শুরম্ন।' পরিশ্রম উপযোগী করে তৈরি এই দেহটি এখন শ্রমবিযুক্ত পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে হারিয়ে ফেলেছে নিজের গতি ও অভ্যনত্দরীণ শক্তি। তার মতে, মানবদেহের যে গঠন সেটা রক্ষা করে চলতে হলে একজন মানুষকে প্রচন্ড শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। তাজা ফলমূল ও ভিটামিন সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক খাবার খেতে হবে এবং দশ ঘণ্টা সময় ধরে ঘুমাতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস, পরিশ্রমহীনতা এবং স্বল্প সময়ের ঘুমে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। এমন কী আধুনিক মানুষ পর্যাপ্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শে পর্যন্ত আসে না। মনোরোগ ও মনোবিকলনের এটাই কারণ বলে মনে করেন তিনি।

পৃথিবীতে এখনো যেসব আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের মধ্যে বিষণ্নতার হার শূন্যভাগ। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে আধুনিক জীবন যাপন কতটা ত্রুটিপূর্ণ। ইলার্ডি বিষণ্নতা দূর করতে কমপৰে ৮ ঘণ্টা ঘুম, পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম, প্রচুর তাজা ফলমূল এবং মাছ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, পাশাপাশি সূর্যালোকের সংস্পর্শে দিনের একটা সময় ব্যয় করারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি, চিন্তাধারা থেকে না বোধক ভাবনা ঝেটিয়ে বিদায় করাও গুরম্নত্বপূর্ণ। এ ধরনের পরামর্শ মেনে চললে বিষণ্নতা থেকে দ্রুত মুক্তিলাভ সম্ভব। খাদ্য তালিকা থেকে ফাস্টফুড বিদায় করতে হবে সর্বাগ্রে। যোগ করতে হবে ফলমূল ও মাছ। ফলে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড। এদু'টি উপাদান শরীরকে চনমনে ও উচ্ছ্বল রাখে। বিষণ্নতাকে বিদায় জানাতে এ ধরনের জীবনাভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।

মস্তিষ্কে নতুন ভাবনার উন্মেষ রুদ্ধ করছে ডিজিটাল সামগ্রী

মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, গেমার, আইপড, ইন্টারনেট, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন ডিজিটাল সামগ্রীর উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে বাধাগ্রস্তহয় মানব মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক ইঁদুরের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, ইঁদুরেরা যখনই কোনো নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় তখন তাদের মস্তিষ্কে নতুন ধরনের আলোড়ন তৈরি হয়। কিন্তু এই আলোড়ন তখনই স্থায়ী স্মৃতিতে রূপ নেয় যখন ইঁদুরের মস্তিষ্ক অবসর পায়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লরেন ফ্রাঙ্ক বলেন, 'ডিজিটাল সামগ্রীর কারণে মানুষের মস্তিষ্ক সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকে। এমন কী অবসরের সামান্য দু এক মিনিট সময়ও কেড়ে নেয় ইন্টারনেট কিংবা আইফোন। ফলে মস্কিষ্ক নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। তৈরি হয় অনাবশ্যক ক্লান্তি। 'তার মতে, আমাদের মস্তিষ্ক সচল থাকার সময় যে সব অভিজ্ঞতা হয় সেসব অভিজ্ঞতা মস্তিষ্ক অলস বা বিশ্রামরত অবস্থায় থাকার সময় অনেক ভালোভাবে বিন্যস্ত হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে রূপ লাভ করে। এই গবেষণার সাথে যুক্ত গবেষকরা ইঁদুরের উদাহরণ টেনে বলছেন, তারাও একইভাবে স্মৃতিকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু শেখে। তাই নতুন চিন্তার স্ফুরণ কিংবা শিক্ষণের ক্ষেত্রে ডিজিটাল সামগ্রীর এমন অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতিকর বলে মনে করছেন তারা।

মোবাইল কিংবা সেলফোন কোম্পানিগুলো বর্তমানে তাদের নিত্যনতুন ব্র্যান্ডের সেটে সংযোজন করছেন অকল্পনীয় সব সুবিধা। বোতান টিপলেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুলে যাচ্ছে তথ্যের জগৎ। পাশাপাশি ইমেইল চেক করার সুবিধা থেকে শুরম্ন করে গেম খেলা, রেডিও শোনা এমন কী টেলিভিশন কিংবা সদ্য মুক্তি পাওয়া হলিউডের সিনেমা দেখারও সুযোগ মিলছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। পাশ্চাত্যের সিংহভাগ মানুষের অভ্যাস ঘুম ভেঙেই ফোনের মনিটরের দিকে তাকানো। এছাড়া টয়লেট, প্রাতরাশের টেবিল, ব্যায়ামাগার কিংবা দোকানের লাইনে দাঁড়িয়েও চলছে ইন্টারনেট ব্রাউজিং কিংবা ফোনালাপ। আধুনিক ব্যায়ামাগারগুলোর যন্ত্রের সঙ্গে বর্তমানে আইপড, টেলিভিশন মনিটর ও গেমার সংযুক্ত থাকে। ফলে জাগ্রত অবস্থায় থাকা মুহূর্তগুলোর সিংহভাগ সময়ই ব্যসত্দ থাকছে মস্তিষ্ক। অফিস বা কর্মক্ষেত্রে ডিজিটাল যন্ত্রের ব্যবহার এখন শতভাগ। তাই মস্তিষ্ক অবসর পাচ্ছে না কখনোই।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, কোনো মানুষ যখন প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত কোনো পরিবেশে হেঁটে বেড়ায় তখন সে অনেক বেশি শিখে। অপরদিকে দালান কোঠা পরিবেষ্টিত নগরের রাসত্দায় হাঁটার সময় মস্তিষ্কের শিক্ষণ প্রক্রিয়া সেভাবে কাজ করে না। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তারা বলেছেন, শহরের রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় এত সব তথ্য মানুষকে হজম করতে হয় যার কারণে মস্তিষ্ক হয়ে পড়ে তথ্যভারাক্রান্ত। ফলে দ্রুতই ক্লান্তি ভর করে। এমন কী যখন মানুষ কর্মক্ষেত্রের বাইরে খুব গা-ছাড়াভাবে সময় কাটায় তখনও মস্তিষ্ক ক্লান্ত হওয়ার হাত থেকে রেহাই পায় না। মিশিগানের গবেষকরা উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, 'ধরুন আপনি বাসস্টপে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। এ সময়টা কাজে লাগানোর কথা ভেবে মোবাইলে ডাউনলোড করছেন কোনো গান কিংবা ভিডিও ক্লিপ। আপনি ভাবতে পারেন এভাবে সহজেই সতেজ হওয়া গেল, পাওয়া গেল একটু বিনোদন কিন্তু তা সঠিক নয়। নিজের অজান্তেই আপনি মস্তিকে ব্যতিব্যস্ত রেখে ক্লান্তই করে তুলছেন তাকে।

হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের মনস্তত্ত্ব বিভাগের সহকারী ক্লিনিক্যাল প্রফেসর জন জে রেটি বলেন, 'ব্যায়াম আমাদের জীবনের অংশ হয়ে ওঠা উচিত। আমাদের শুয়ে বসে কাটানো জীবন থেকে শরীরচর্চার মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে হবে।' তিনি আধুনিক ব্যায়ামাগারগুলোতে যেসব ব্যবস্থা রয়েছে তার অনাবশ্যকতা তুলে ধরেন। তার মতে, ডিজিটাল সামগ্রীকে পেছনে ফেলে এসব থেকে ছুটি নিয়ে প্রকৃতির মাঝে হাঁটা কিংবা দৌড়ানোই হল সবচেয়ে উপকারী শরীরচর্চা। এখনকার বহু গবেষকই রেটির সঙ্গে গলা মিলিয়ে ডিজিটাল পণ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। জীবনকে আরো নতুন ভাবনা ও সৃজনশীলতা দিয়ে সাজাতে হলে এসব যন্ত্র-নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তারা।


দ্য নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে

অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে সব ধরনের এন্টিবায়োটিক

সম্প্রতি ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়ার পর বিজ্ঞানীরা এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন। তারা আশংকা করছেন ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়তে পারে পৃথিবীব্যাপী। আর তার ফলে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বিপুল প্রাণহানি ঘটবে বিশ্বজুড়ে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের গবেষক অধ্যাপক টিম ওয়ালশ এনডিএম-১ নামের একটি জিন আবিষ্কার করেছেন যা ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে সহজে বাহিত হতে পারে। কোনো ব্যাকটেরিয়া একবার এই জিনের অধিকারী হলে সেটি ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুতে পরিণত হয়। অতি সম্প্রতি 'এসক্লেরেশিয়া কোলাই' ও 'ক্লেবসিলিয়া নিউমোনি' নামের দু'টো জীবাণুতে এ ধরনের জিনের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী এন্টিবায়োটিক 'কার্বাপেনেমস'ও কাজ করে না। 'কার্বাপেনেমসকে' বলা হয় জীবাণুর বিরুদ্ধে মানুষের শেষ অস্ত্র। বিজ্ঞানীদের মতে, এই শেষ অস্ত্রটি অকার্যকর হয়ে উঠার সাথে সাথে মানুষ এন্টিবায়োটিক পরবর্তী যুগে প্রবেশ করল। এর প্রকৃত অর্থ হল নতুন জীবাণুর বিরুদ্ধে এন্টিবায়োটিকের আর কোনো কার্যকারিতা অদূর ভবিষ্যতে নাও থাকতে পারে।


১৯২৮ সালে আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিন আবিষ্কারের পূর্বে পৃথিবীর যে পরিস্থিতি ছিল মানুষ আবারো সে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে শুরু করেছে বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিজ্ঞানীরা। পেনিসিলিনপূর্ব পৃথিবীতে এপেন্ডিসাইটিসের মত ছোটখাট অপারেশনও ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। বিজ্ঞানীদের মতে তেমন পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। ভারতসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে অপারেশনের পর রোগীর দেহে এ ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ ঘটছে। হাসপাতাল থেকে সংক্রমিত 'হসপিটাল নিউমোনিয়া' বা 'সেপটিসেমিয়াতে' মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ারও অন্যতম কারণ ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া।

ওষুধের বিরুদ্ধে ব্যাকটেরিয়াদের এই বিজয়ে বিস্মিত নন অধ্যাপক টিম ওয়ালশ এবং তার সহকর্মীরা। তারা জানান, বিষয়টি বোঝা যাবে ডারউইনের সূত্র থেকে। ডারউইন বলেছেন, 'প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্যই জীব নিজের দেহে পরিবর্তন আনে। এই পরিবর্তনের অব্যাহত ধারাই হল বিবর্তন।' ব্যাকটেরিয়াগুলো সম্প্রতি ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রেও বিবর্তন কাজ করছে। বিজ্ঞানীদের মতে, জীবমণ্ডলীর মধ্যে ব্যাকটেরিয়াদের অভিযোজন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। তাই কিছুকাল পরপরই তারা এক একটি এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। অর্থাৎ সেসব এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অর্জন করে। সম্প্রতি যে সব ব্যাকটেরিয়াতে 'এনডিএম-১' জিন পাওয়া গেছে তারা কেপিসি নামের এক প্রকার এনজাইম তৈরি করে যার প্রভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী এন্টিবায়োটিকটিও কাজ করে না। এই ক্ষমতা ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে এসেছে বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই। তাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণেই তারা ধীরে ধীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে সব ওষুধের বিরুদ্ধে।

জীবাণুর বিরুদ্ধে মানুষের দীর্ঘস্থায়ী এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়াদেরই জয় হবে বলে আশংকা করছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, এর ফলে ভবিষ্যতে যেকোনো আঙ্গ প্রতিস্থাপনের অপারেশন করা যাবে না কারণ এসব অপারেশনের সময় রোগীকে এমন ওষুধ দেয়া হয় যা দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বিকল্প হিসেবে এন্টিবায়োটিক দেয়া হয় রোগীকে যা তাকে রক্ষা করে সংক্রমণের হাত থেকে। কিন্তু ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর আবির্ভাবের ফলে এখন থেকে আর এমন অপারেশনে এন্টিবায়োটিক কাজ করবে না। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাবে এপেন্ডিক্স অপারেশনের মত সব ধরনের ছোটখাট অপারেশনও। কারণ তাতে রোগীর সেপটিসেমিয়া হওয়ার আশংকা থাকবে। বৃদ্ধ এবং শিশুদের প্রাণঘাতি নিউমোনিয়ার হাত থেকে রক্ষার কোনো উপায় থাকবে না। এসব রোগে বিশ্বজুড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যাবে। গনোরিয়া কিংবা যক্ষা দেখা দিতে পারে মহামারি আকারে। এসব রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ওষুধই থাকবে না মানুষের হাতে।

টাক সমস্যার সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছেছে বিজ্ঞান


পুরম্নষের অন্যতম বিড়ম্বনার নাম টাক সমস্যা। টাক ঢাকতে কাঁড়িকাঁড়ি টাকা ঢেলেও স্থায়ী সমাধান পেয়েছেন এমন পুরম্নষের সংখ্যা নগণ্য। বহু কোম্পানি চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে রাতারাতি টাক মাথায় চুল গজানোর কথা বললেও বাস্তবে এসব প্রলোভন ছাড়া কিছুই নয়। ভুঁইফোঁড় কোম্পানিগুলো এই সুযোগে সহজ সরল টেকো পুরম্নষদের পকেট সাফাই করলেও মাথাভর্তি অকৃত্রিম চুল উপহার দিতে পারেনি। এই অসফলতার পেছনে রয়েছে টাক সমস্যার শারীরতাত্ত্বিক কারণ নির্ণয় না করতে পারা। চিকিৎসা বিজ্ঞান টাক পড়ার প্রক্রিয়াটা জানিয়েই খালাস কিন্তু টাকের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করছে কোন উপাদান তা এতদিন জানা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি একদল মার্কিন বিজ্ঞানী তাদের গবেষণার মাধ্যমে টাক মমস্যার জন্য দায়ী মূল উপাদানটি খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। জিন বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে এই তথ্য বিজ্ঞানীদের পক্ষে জানা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এনজেলা ক্রিস্টিয়ানো এবং তার সহকর্মীরা টাক সৃষ্টির জন্য দায়ী ১৮টি জিনকে চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর বলে জানা গেছে 'ইউএলবিপি' নামের একটি জিন। এই জিনের উপস্থিতিতে শরীরে এক ধরনের অতিরোগ প্রতিরোধী অবস্থা সৃষ্টি হয় যার ফলে শরীরের জীবাণু ধ্বংসকারী কোষগুলো স্বাভাবিক কোষকে আক্রামণ করে বসে। পুরম্নষালি টাক অ্যালোপেশিয়া অ্যারিএটায় আক্রানত্দ প্রায় একশ' জন রোগীর উপর সমীৰা চালিয়ে এই তথ্য জানা গেছে।

মানবদেহের কয়েক ধরনের রক্তকোষের মধ্যে অন্যতম হল শ্বেত রক্তকণিকা বা হোয়াইট বস্নাড সেল। এই কোষকে খুনি কোষ বা কিলার সেল নামেও অভিহিত করা হয়। শ্বেত রক্তকণিকা শরীরে প্রবেশকারী জীবাণু ধ্বংস করে এবং দেহকে রোগের সংক্রমণ হতে বাঁচায়। কিন্তু টাক বা অ্যালোপেশিয়ায় আক্রানত্দ রোগীদের ক্ষেত্রে শ্বেত রক্তকণিকা ভুলবশত চুলের কোষকে আক্রমণ করে এবং তাদের ধ্বংস করে। 'ইউএলবিপি' জিনের উপস্থিতির কারণে এমনটা ঘটে থাকে। এই জিন শরীরে এমন একটি প্রোটিন তৈরি করে যা শ্বেত রক্তকণিকাকে অতি উদ্দীপিত করার মাধ্যমে টাক সমস্যার জন্ম দেয়।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম বিশেষজ্ঞ রড সিনক্লেয়ার বলেন, 'টাক সমস্যা সমাধানে এটি একটি বড় ধরনের অগ্রগতি। আমরা এতদিন অন্ধের মত হাতড়েছি কিন্তু এখন মূল সত্য উদঘাটন হল। টাক সমস্যার জন্য দায়ী জিনটিকে নির্মূলের মাধ্যমে মাথার হারানো চুল ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব।'
বিবিসি অবলম্বনে

সন্ধিবাত সারাবে মৌমাছি!

আথ্রাইটিস বা সন্ধিবাতের ব্যথায় কাতর যারা তাদের জন্য সুখবর বয়ে এনেছে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়। জানা গেছে, মৌমাছির হুলের বিষ সন্ধিবাত সারাতে সৰম এমন কী তা প্রতিরোধও করতে পারে। ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালিয়ে প্রমাণ পেয়েছেন, মৌমাছির হুলনিসৃত বিষ মারাত্মক ধরনের অস্থিসন্ধির বাত সারিয়ে তুলতে পারে। মৌমাছির বিষ হাঁড়ের সন্ধিস্থলের প্রদাহ রোধ করতে শরীরকে সহায়তা করে। এই বিষ শরীরে প্রবেশ করলে প্রদাহবিরোধী স্বাভাবিক হরমোনের উৎপাদন বেড়ে যায় বলে জানা গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গবেষণার ফলাফল সন্ধিবাত ও বাতজ্বরজনিত সন্ধিবাত সারিয়ে তুলতে যথেষ্ট তথ্য যোগাবে। এর ফলে রোগীর ব্যথা যেমন কমানো যাবে তেমনি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে আক্রানত্দ হওয়ার হাত থেকেও রোগীকে বাঁচানো যাবে বলে মনে করছেন তারা।


এই প্রকল্পের প্রধান গবেষক রিউম্যাটোলজির অধ্যাপক সুজানা বিয়াত্রিচ ভেরিসিমো ডি মেলো বলেন, 'মৌমাছির বিষ শরীরে প্রদাহবিরোধী হরমোন গস্নুকোকর্টিকয়িডসের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।' মেলো ব্যাখ্যা করে বলেন, 'মৌমাছির বিষ শরীরে অ্যালার্জির লৰণ তৈরির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উদ্দীপিত করে তোলে। ফলে এ ধরনের হরমোন বেড়ে যায় যা সন্ধিবাতের প্রদাহ কমিয়ে আনে।

এই গবেষণার আগে থেকেই প্রায় শতাব্দিকাল ধরে সন্ধিবাতের চিকিৎসায় মৌমাছির বিষ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু লোকজ এই চিকিৎসা পদ্ধতির কোনো স্বীকৃতি ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছিল না। ড. মেলোর গবেষণার পর আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন এই পদ্ধতি প্রয়োগ করবে বলেই ধারণা করছেন সংশিস্নষ্টরা। ডি মেলো বলেন, 'খরগোশের উপর মৌমাছির বিষ প্রয়োগ করে দেখা গেছে তাদের দেহেও গস্নুকোকর্টিকয়িডস বেড়ে যায় এবং সন্ধিবাত নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে।' কেবল সন্ধিবাতই নয় মেলো জানাচ্ছেন, হাঁপানি এবং ধমনী শক্ত ও অনমনীয় হয়ে পড়ার রোগ মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসেও মৌমাছির বিষ ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে। সেদিন হয়ত আর বেশি দূরে নয় যেদিন মৌমাছির হুলের দর্শন লাভ করতে দলে দলে মানুষ ঢিল ছুড়বে মৌচাকে।

অগোছালো ও এলোমেলো বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস স্বাস্থ্যকর

আপনি যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানা গোছাতে ভুলে যান তবে তা নিয়ে খুব একটা আক্ষেপ না করলেও চলবে। আলস্যকে প্রশ্রয় দিয়ে বিছানা গোছানোর কাজটা একেবারেই বাদ দিলেও সমস্যা নেই। কারণ অগোছালো, এলোমেলো বিছানায় ঘুমানো স্বাস্থ্যকর বলে জানা গেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণার পর। এলোমেলো অগোছালো বিছানা দেখতে যেমনই হোক তাতে ঘুমালে অতি ক্ষুদ্র পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। ডাস্ট মাইট নামে পরিচিত এসব পোকা চোখে দেখা না গেলেও এরা আমাদের বিছানায় দিব্যি ঘর সংসার পেতে বসতে পারে। একটি বিছানায় প্রায় ১৫ লক্ষ ডাস্ট মাইট থাকতে পারে যা শ্বাসতন্ত্রের নানা জটিল রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। হাঁপানি, কাশি ও অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী এসব ক্ষুদ্র পোকা অগোছালো বিছানায় থাকতে পারে না। গোছানো, পরিপাটি বিছানায় আদ্রতা বেশি থাকে বলে সহজেই ধুলার পোকারা সেখানে আখড়া গাড়ে। অপর দিকে অপরিপাটি বিছানা থাকে শুষ্ক ও উষ্ণ। এমন পরিবেশে ভাস্ট মাইট থাকতে পারে না। এক মিলিমিটারের চেয়েও ক্ষুদ্র এসব পোকা ঘুমের সময় আক্রমণ করে। এরা মানুষের ত্বকের আঁশ খায় এবং অ্যালার্জির উপাদান তৈরি করে। ফলে চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির মত রোগ দেখা দেয়।


ভেজা স্যাঁতসেঁতে ভাব ক্ষুদ্র এসব পতঙ্গের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। এ নিয়ে গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা একটি বিশেষ কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে ক্ষুদ্র পতঙ্গগুলোর জীবনচক্র পর্যবেৰণ করেছেন। কীভাবে পতঙ্গগুলোকে ঘুমানোর স্থান থেকে বিতাড়িত করা যায় তা জেনে নেওয়াটাই ছিল তাদের লৰ্য। গবেষকরা লৰ্য করেছেন এসব বিছানার পোকার দেহের বাহিরের অংশে এক ধরনের গ্রন্থি থাকে। এ গ্রন্থির সাহায্যে পোকাগুলো বাতাস থেকে জলীয়বাষ্প শুষে নেয়। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ড. স্টিফেন প্রেটলভ বলেন, 'বিছানা আদ্রতা থাকলে পোকাগুলো বাতাস থেকে পানি সংগ্রহ করতে পারে। বিছানা শুষ্ক থাকলে পোকাগুলো পানি সংগ্রহ করতে পারে না ফলে ধীরে ধীরে পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হয়ে তারা মারা যায়।

মানুষের জীবনযাত্রা এসব পোকার উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে তাও জানার চেষ্টা করেছেন গবেষকরা। যুক্তরাজ্যের প্রায় ৩৬ বাড়ির বিছানায় ডাস্ট মাইটদের কর্মকাণ্ড পর্যবেৰণের জন্য তারা যন্ত্রপাতি লাগিয়েছিলেন। ঘরের তাপমাত্রা, আলোবাতাস, আদর্্রতা ইত্যাদি পোকাদের উপর কেমন প্রভাব ফেলে তারা তা জানতে সৰমও হয়েছেন। এই গবেষণায় সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন বিজ্ঞানী ড. ম্যাট হলসওয়ার্থ। যুক্তরাজ্যের 'চ্যারিটি অ্যাজমা' নামের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এই গবেষক বলেন, গৃহস্থালীর ডাস্ট মাইট হাঁপানি রোগের বড় কারণ। অথচ এর বিরম্নদ্ধে এখন পর্যনত্দ কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে ঘরের পরিবেশকে এসব পোকামাকড়েরন বসবাসের প্রতিকূল করে তুলতে পারলে ফল পাওয়া যাবে। ঘর যাতে যথেষ্ট উষ্ণ থাকে এবং আদর্্রতা যাতে একেবারেই না থাকে সেদিকেই লৰ্য রাখতে হবে।


বিবিসি অবলম্বনে

স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ১০টি কারণে


বিশ্বজুড়ে স্ট্রোকজনিত মৃত্যুর হার বাড়ছে। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক লোক এই রোগে মৃতু্যবরণ করার পাশাপাশি চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। উলেস্নখ্য, স্ট্রোক মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত একটি রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনী ছিঁড়ে যায় এবং রক্তক্ষরণের ফলে রোগীর মৃতু্য হয়। সাধারণত রক্তনালীতে চর্বি জমে সরম্ন হয়ে গেলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। রক্তনালীতে চর্বির সত্দর আরো বেড়ে গেলে এক সময় রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং রক্তনালীটি ছিঁড়ে গিয়ে স্ট্রোক হয়। জীবন-যাপন ও খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে স্ট্রোকের সম্পর্ক রয়েছে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা ৯০ ভাগ স্ট্রোকের পেছনে কিছু সাধারণ কারণ কাজ করে। এসব কারণ বা ফ্যাক্টর না থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে না। সম্প্রতি কানাডার একটি গবেষণা সংস্থা তাদের গবেষণায় জানতে পেরেছে উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, স্থূলতা (বিশেষ করে পেটের চারপাশে মেদ সঞ্চয়), অকর্মণ্যতা বা আলস্য, মানসিক চাপ ইত্যাদির প্রভাবে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করে উচ্চ রক্তচাপ ও ধূমপান। উচ্চ রক্তচাপ ও হাইপারটেনশনে ভুগলে শরীরে নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তনালীর গায়ে চাপ তৈরি হয়। তার সাথে যদি ধূমপানের অভ্যাস থাকে এবং রক্তনালীতে চর্বি জমে তবে এই তিনের প্রতিক্রিয়ায় স্ট্রোক হতে পারে যে কোনো সময়।

অধিক ওজন, স্থূলতা, স্ট্রেস, খাদ্যাভ্যাস, কর্মহীনতা এবং নিয়মিত ঘুম না হওয়াও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এসব ঝুঁকি দূর করতে পারলে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যাবে।

হ্যামিলটনের ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সেলিম ইউসুফ বলেন, 'উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি তৈরি করে।' তাছাড়া মেদবহুল শরীর, কর্মহীনতা এবং স্ট্রেসও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বলে তিনি জানান। যাদের স্ট্রোক হয় তাদের সবার রক্তেই চর্বির হার থাকে খুব বেশি। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে রক্তে চর্বি বা কোলেস্টেরলের হার কমাতে হবে। মার্চ ২০০৭ থেকে এপ্রিল ২০১০ পর্যনত্দ প্রায় ২২টি দেশের ৬ হাজার লোকের উপর গবেষণা চালিয়ে গবেষকরা এসব তথ্য পেয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষই স্ট্রোকে আক্রানত্দ হয়েছেন।

দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া অবলম্বনে

কফি আপনাকে করে তুলতে পারে বিস্মৃতিপ্রবণ


প্রতিদিন ভোরে পুরোপুরি ঘুম থেকে জেগে উঠতে অনেকেই কফি পান করেন। তাৎক্ষণিক সতেজ অনুভূতি এনে দিতে কফির তুলনা নেই। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জনপ্রিয় এই পানীয়ের একটা ক্ষতিকর দিকের কথাও জানা গেছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত কফি পানের অভ্যাস চট করে কোনো কিছু মনে করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। 'মনে পড়ি পড়ি করেও মনে পড়ছে না' এমন অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে কফি আসক্তদের। ইংরেজি ভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয় 'টিপ অফ দ্য টাং' অবস্থা অর্থাৎ জিভের ডগায় আছে তবু মনে পড়ছে না। এভাবে চট করে কোনো শব্দ বা বাক্য মনে করার ৰেত্রে কফি অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।

ইতালির স্কুল ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের গবেষক ভালেরি লেস্ক বলেন, কফি মস্তিষ্ককে সজাগ ও সতর্ক এবং উদ্দীপ্ত করে। এটা করতে গিয়ে মস্তিষ্কের অন্যান্য কার্যক্রমকে প্রায় বন্ধ করে দেয় কফির রাসায়নিক উপাদান ক্যাফেইন। ফলে এমন অবস্থায় কোনো কোনো প্রয়োজনীয় ও জানা শব্দ মনে করতে সমস্যা হয়।

গবেষক লেস্ক এবং তার সহযোগী গবেষক ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপক স্টিফেন ওমবলে এ বিষয়ে আরো কিছু চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছেন তাদের গবেষণায়। তারা জানান, কফি কেবল স্মৃতি পুনরুদ্ধারে সমস্যাই করে না বরং মাঝে মাঝে খুব অল্প সময়ের জন্য স্মৃতি পুনরুদ্ধারে সাহায্যও করে। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মস্তিষ্কের জন্য ভালো নয় বলেই মনে করেন তারা। এতে আসক্তরা বিস্মৃতিপ্রবণ হয়ে উঠতে পারেন বলে তাদের আশংকা।

কফি নিয়ে এই গবেষণার অংশ হিসেবে গবেষকরা ৩২ জন কলেজ শিৰার্থীকে দু'ভাগে বিভক্ত করে পরীক্ষা চালিয়েছেন। একদলকে ২০০ মিলিগ্রাম অর্থাৎ দু'কাপ কড়া কফির সমান ক্যাফেইন খাওয়ানো হয়েছিল অন্য দলকে দেয়া হয়েছিল একই রকম দেখতে একটি ওষুধসদৃশ ট্যাবলেট। এরপর দু'দলকেই ১০০টি সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন দেয়া হয়েছিল। কেবলমাত্র একটি শব্দ দিয়েই যাতে উত্তর দেয়া যায় প্রশ্নগুলো সেভাবেই করা হয়েছিল। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য আটটি শব্দ উলেস্নখ ছিল সম্ভাব্য উত্তর হিসেবে। প্রতি দ্বিতীয় এবং অষ্টম শব্দের সঙ্গে ছিল উচ্চারণগত মিল। কিন্তু দু'টি শব্দের অর্থের মধ্যে ছিল বহু ব্যবধান। যেমন একটি প্রশ্ন ছিল প্রাচীন মিশরের লিপির নাম কী? এর উত্তর হল 'হায়ারোগিস্নফিকস'। এর সাথে ধ্বনিগত মিল আছে হায়ারারর্কি শব্দটির। প্রশ্নপত্রে এই দু'টি শব্দ দেখার পর যারা ক্যাফেইন বড়ি খায়নি তারা ঠিকঠাক উত্তর দিতে পেরেছিল কিন্তু যারা ক্যাফেইন বড়ি সেবন করেছিল তাদের অধিকাংশই হায়ারারর্কিকে হায়ারোগিস্নফিকসের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছিল। ক্যাফেইন তাদের স্মরণশক্তির উপর খারাপ প্রভাব তৈরি করায় এ ধরনের সমস্যা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশিস্নষ্ট গবেষকরা।


বিবিসি অবলম্বনে

শিশুদের খালি পায়ে হাঁটতে দিন

অনেক বাবা মা হাঁটতে শেখার পর থেকেই শিশুদের জুতো পরিয়ে রাখেন। 'স্যান্ডেল বা জুতো ছাড়া হাঁটা বারণ'-এমন নিষেধ শুনতে হয় প্রায় প্রতিটি শিশুকে। বহু বাবা মা আবার শিশুকে শক্ত ও হিলযুক্ত জুতো পরান। পছন্দের জুতো পরার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে চান শিশুর পা জোড়া। অথচ পায়ের জন্ম হয়েছে হাঁটার জন্য, জুতো পরে থাকার জন্য নয়। জুতো জোড়া বড় জোর পাকে আঘাত থেকে রৰা করে। তবে শিশু বিশেষজ্ঞদের সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, জুতো পাকে রৰা করার বদলে বরং পায়ের ৰতি করে। যুক্তরাজ্যের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও শিশুদের পায়ের গঠন নিয়ে দীর্ঘকাল গবেষণার সঙ্গে যুক্ত গবেষক ট্রেসি বার্নি বলেন, 'জুতো পরে হাঁটলে শিশুদের পায়ের স্বাভাবিক গঠন পাল্টে যায় এবং মসত্দিষ্কের বিকাশও বাধাগ্রসত্দ হয়।' তার মতে একটি শিশু যখন খালি পায়ে হাঁটে তখন তার মসত্দিষ্ক সতর্ক ও সংবেদনশীল থাকে। মাটিতে নগ্নপায়ের স্পর্শ তাকে পরিবেশ ও পরিপাশর্্ব সম্পর্কে অবিরাম তথ্য জোগায়। এ সময় শিশু সতর্ক থাকে এবং হাঁটার নিয়ম ও ছন্দ রপ্ত করতে চেষ্টা করে। অপরদিকে জুতো পরে হাঁটলে নিচের দিকে তাকানোর প্রয়োজন পড়ে না তার। ফলে মাটির সাথে পায়ের স্পর্শের ফলে যে অনিন্দ্য অনুভূতির জন্ম হয় তা থেকে সে বঞ্চিত থেকে যায়। কেবল তাই নয়, খালি পায়ে হাঁটলে পায়ের পেশি, লিগামেন্ট এবং পায়ের পাতার হাড় সুগঠিত হয়। পাশাপাশি এমন অভ্যাস পায়ের পাতার ভারসাম্য তৈরি করে এবং পরিবেশ ও পরিপাশ্বর্ের সঙ্গে একটি শিশুর স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়। ফলে শিশুরা খুব ভালো হাঁটার ভঙ্গি রপ্ত করে সহজেই।


'দ্য ফুট' নামে শিশুদের পায়ের স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি চিকিৎসা সাময়িকীতে অনুরূপ একটি গবেষণা প্রতিবেদন ছাপা হয় এর আগে। সে গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, জুতো শিশুদের পায়ের স্বাভাবিক গঠনকে নষ্ট করে। খালি পায়ে হাঁটলে পা প্রাকৃতিক নিয়মে স্বাভাবিকভাবেই হাঁটা চলার উপযুক্ত হয়ে বেড়ে ওঠে। অপরদিকে জুতো পরার অভ্যাসের কারণে পা হয় ত্রম্নটিপূর্ণ। ২৫ বছর ধরে নগ্নপদে হাঁটছেন যুক্তরাজ্যের স্কুল শিৰক জন উডওয়ার্ড। তিনি বলেন, 'এটা সত্যি যে আমরা আদিম যুগে বসবাস করছি না। নাগরিক জীবনে শহরে চলতে ফিরতে পা জোড়াকে বিপদের হাত থেকে রৰা করতে জুতো প্রয়োজন। কিন্তু আমরা ভুলে গেছি এটা সার্বৰণিক কোনো ব্যবস্থা নয়। জুতো আমাদের ৰণিকের প্রয়োজন মেটায় মাত্র।' তার মতে অধিকাংশ বাবা মা সনত্দানদের সাইজমত জুতো পরানোর জন্য উৎকণ্ঠিত। বাবা মায়েরা সনত্দানদের নির্দিষ্ট সাইজের জুতো পরাতে পারলেই সন্তুষ্ট। পা বেঢপ হয়ে পড়লে বাজারের কোনো জুতোই সনত্দানের পায়ে লাগবে না এমন দুশ্চিনত্দাও তাদের মনে কাজ করে বলে তিনি মনে করেন। একবার একটি রেসত্দোরাঁয় তাকে খালি পায়ে দেখে একটি শিশুও সাথে সাথে জুতো জোড়া খুলে ফেলে। সে অভিজ্ঞতার বিবরণ দিতে গিয়ে উডওয়ার্ড বলেন, 'শিশুটি জুতো খুলে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে তার মা তাকে দ্রম্নত জুতো পরে নিতে নির্দেশ দেন। মা তার সনত্দানকে বলছিলেন, তুমি যদি জুতো না পর তবে তোমার পায়ে আর কোনো জুতোই আঁটবে না।' উডওয়ার্ডের মতে, মায়েরা জুতোর জন্য যতটা শংকিত শিশুর পায়ের জন্য ততটা নন।

উডওয়ার্ড মনে করেন মানুষের পা হাঁটা চলা, দৌড়ানো, বাধা ডিঙানো, গাছে চড়া ইত্যাদি সবকিছুর জন্য উপযুক্ত। জুতো পায়ের সেই সৰমতাকে নষ্ট করে।

গবেষকদের মতে, শিশুদের পা পূর্ণ বয়স্কদের পায়ের মত সুগঠিত থাকে না। পায়ের পাতায় যে ২৮টি হাড় থাকে সেসবের পরিপূর্ণ বিকাশ হতে অনত্দত ১০ থেকে ১২ বছর সময় লাগে। প্রধানত তরম্নণাস্থি এবং পেশি দ্বারা গঠিত শিশুদের পা একবার জুতোর ভেতরে ঢুকলে তাই বিকশিত হবার সুযোগ পায় না। শিশুদের পায়ের এবং মসত্দিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য তাই নগ্নপদে হাঁটাকেই সমর্থন করেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।

গৃহস্থালীর কাজ করলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে

যেসব নারী নিয়মিত ব্যায়াম করার সময় পান না কিন্তু গৃহস্থালীর কাজে যথেষ্ট ব্যসত্দ সময় কাটান তাদের সত্দন ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুলাংশে হ্রাস পায়। ইউরোপের প্রায় ২ লক্ষ নারীর উপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে খেলাধুলার চাইতেও নারীদের বেশি সুরক্ষা দেয় গৃহস্থালীর কাজ কর্ম। ঘর মোছা, ঘর ঝাড়ণ্ড দেয়া, কাপড় কাচা ইত্যাদি যেকোনো শারীরিক ব্যায়ামের চাইতে কার্যকর বলে জানান চিকিৎসকরা। যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার গবেষণার সাথে যুক্ত নারীদের অর্থায়নে এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।


সপ্তাহে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা রান্না ও ধোয়া-মোছার মত গৃহস্থালীর কাজে জড়িত নারীরা সত্দন ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে অনেকটাই নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরেই বলে আসছিলেন, ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। সম্ভবত শরীরের বিপাক ক্রিয়া ও হরমোনের কার্যক্রমে উন্নতি দেখা দেয় ব্যায়ামের ফলে। কিন্তু ব্যায়ামের ফলে ক্যান্সার ঝুঁকি কতটা কমে তা জানা সম্ভব হয়নি এতদিন। পাশাপাশি যাদের বয়েসের কারণে মাসিক ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে গেছে 'মেনোপজে' পৌঁছানো সেসব নারী ব্যায়ামের সুফল বেশি পেয়ে থাকেন বলে দেখা গেছে। কিন্তু ঋতুমতি নারীরা ব্যায়ামের দ্বারা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি খুব কমাতে পারেন না বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। কিন্তু চমকপ্রদ তথ্য হল, প্রায় সব বয়সী নারীদের ক্ষোত্রেই গৃহস্থালীর কাজ অনেক বেশি কার্যকর ফল দেয়। সত্দন ক্যান্সারের ৰেত্রে অনেক বেশি সুরৰা তৈরি করে নারীদের সংসার সংলগ্নতা।

গবেষকদের মতে, গৃহস্থালীর কাজ ঋতুমতি নারীদের ক্ষেত্রে ৩০ ভাগ এবং মেনোপজে পৌঁছানো বয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে ২০ ভাগ সত্দন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। প্রায় সাড়ে ছয় বছর ধরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নারীদের উপর এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। উক্ত সময়ের মধ্যে গবেষণায় অংশ নেয়া প্রায় ২ লক্ষ নারীর মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার নারীর ক্যান্সার হয়েছে।

গবেষকদের মত হল যেকোনো ভাবেই নিজেকে সচল রাখলে সত্দন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমবে। গৃহস্থালীর কাজতো বটেই নিজের কর্মৰেত্রে শারীরিক পরিশ্রমও যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। সবচেয়ে বড় কথা হল শরীরের বিপাক ও হরমোনের ক্রিয়া বিক্রিয়াকে স্বাভাবিক ও কার্যকর রাখা।


বিবিসি অবলম্বনে

মানুষের দৈহিক গঠনে ভিন্নতার জন্য দায়ী ডিএনএর খোঁজ মিলেছে

দু'জন মানুষের চেহারা ও শারীরিক গঠন কখনো একরকম হয় না। এমনকী যমজ ভাইবোনদের আপাতদৃষ্টিতে সাদৃশ্যপূর্ণ মনে হলেও তাদের মধ্যেও একই রকম বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। পৃথিবীতে একই রকম দৈহিক গঠনযুক্ত দু'জন মানুষ কখনো পাওয়া সম্ভব নয়। এর কারণ হল তাদের জিনগত স্বাতন্ত্র্য। প্রতিটি মানুষের ভিন্নতার সাথে তাই সম্পর্ক রয়েছে জিনের গঠনের। জিনবিদ্যা বা বংশগতির জনক গ্রেগর জোহান মেন্ডেল ১৮৫৬ সালে মটরগাছ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এ সম্পর্কে প্রথম মানুষকে ধারণা দেন। এরপর প্রায় একশতাব্দীরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এ বিষয়ে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। তবে সম্প্রতি মানুষের জিন নক্সা আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীরা মানবদেহের রহস্য উন্মোচনে অনেকদূর অগ্রগতি অর্জন করেছেন।

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মানুষের জিন নক্সা বা জিনোম বিশেস্নষণ করে এমন একটি ডিএনএ আবিষ্কার করেছেন যা শারীরিক ভিন্নতার জন্য দায়ী বলে তারা মনে করছেন। সম্প্রতি 'সেল' নামের একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ সংক্রানত্দ তথ্য তুলে ধরা হয়। মানবকোষের ডিএনএর মধ্যে এমন একটি সঞ্চারণশীল খণ্ডাংশ তারা আবিষ্কার করেছেন যেটি খুব দ্রম্নত নিজের প্রতিরূপ তৈরি করতে পারে, ইচ্ছেমত স্থান বদল করতে পারে এবং ডিএনএর যেকোনো স্থানে ঢুকে পড়তে পারে। ডিএনএর এই খণ্ডাংশের নাম দিয়েছেন তারা 'ট্রান্সপোসনস'। 'ট্রান্সপোসনস' ডিএনএর মধ্যে ঠিক কীভাবে সজ্জিত রয়েছে তার উপর নির্ভর করে একজন লম্বা না বেঁটে, কোঁকড়ানো চুল না কালো বর্ণের অধিকারী হবে। এই ডিএনএ খণ্ডাংশের বৈচিত্র্যের জন্যই একজন মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকি জন্মগতভাবে বেশি আবার কারো কম থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আবিষ্কারের ফলে কোন ব্যক্তি কী ধরনের রোগে আক্রানত্দ হতে পারে তা আগে থেকে বলে দেয়া সম্ভব।

বিজ্ঞানীরা বিশেষ একধরনের চিপ ব্যবহার করেছেন এই গবেষণায় যেটিতে মানব জিনোমের সব ধরনের ডিএনএ সজ্জা বা সিকোয়েন্স রয়েছে। ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের রক্ত থেকে সংগৃহীত ডিএনএর সাথে চিপের মধ্যে থাকা জিনোমের ডিএনএ সজ্জার তুলনা করেন তারা। এ ধরনের বিশেস্নষণ থেকেই 'ট্রান্সপোসনস' এর বৈচিত্র্যময় উপস্থিতি চোখে পড়ে বিজ্ঞানীদের। ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক থেকে নেয়া ডিএনএগুলোর প্রতিটিতে প্রায় ১০০ টির উপর 'ট্রান্সপোসনস' এর উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছেন তারা। 'ট্রান্সপোসনস' এর এ ধরনের বিচিত্র সজ্জাই ব্যক্তির ভিন্নতার জন্য দায়ী বলে জানান জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. জেফ বোয়েক।

সুন্দরী নারী পুরুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

সুন্দরী দেখলে আড়চোখে তাকানো পুরুষের নতুন অভ্যাস নয়৷ তার উপরে যদি সেই নারী একটু বেশিই সুন্দরী হন, তাহলে লাজলজ্জা ভুলে তার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতেও দেখা যায় অনেক পুরুষকে৷ সাবধান, সুন্দরীরা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷

হ্যাঁ, একদল গবেষক বলছেন, আকর্ষনীয় নারীর সান্নিধ্যে আসলে পুরুষের মধ্যে মানসিক চাপ বাড়তে থাকে৷ এমনকি এই চাপ বাড়ার কারণে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে!
সুন্দরী নারীদের নিয়ে এমন মতামত প্রচার করছেন স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা৷ তাঁদের কথায়, একজন পুরুষ সুন্দরী নারীর পাশে পাঁচ মিনিট বসলেই নাকি পুরুষের মধ্যে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়৷ যা শরীরে কোর্ট্রিসল নামক বিশেষ হরমোনের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়৷ আর বিপত্তি সেখানেই৷ এই হরমোনের বাড়তি প্রবাহ আবার হৃদযন্ত্রের নানা রোগের জন্য দায়ী৷
অবশ্য গবেষকরা আশ্বস্ত করে বলেছেন, পুরুষদের মধ্যে যারা নারীদের কাছ থেকে সবসময় দূরে থাকতে ভালোবাসেন তাদের জন্য সুন্দরীরা একটু বেশি ক্ষতিকর৷
ভ্যালেন্সিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা, ৮৪ জন স্বেচ্ছাসেবী পুরুষের উপর গবেষণা চালিয়ে প্রকাশ করেছে এই তথ্য৷ এসব স্বেচ্ছাসেবীদের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এককভাবে একটি কক্ষে বসিয়ে সুডোকু পাজল এর সমাধান করতে বলা হয়৷ এসময় অপরিচিত সুন্দরী এক নারীকে ঢুকিয়ে দেয়া হয় সেই রুমে৷ আর তাতেই নাকি অনেকের শরীরে কোট্রিসল এর প্রবাহ বেড়ে যায়৷ কিন্তু নারীর স্থলে কোন পুরুষ রুমে ঢুকলে স্বেচ্ছাসেবী পুরুষদের মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি৷
গবেষকরা বলছেন, কম বয়সী সুন্দরী নারী আশেপাশে দেখলে অধিকাংশ পুরুষ প্রেমের সুযোগ আছে বলে ভাবতে শুরু করেন৷ খুব কম পুরুষই সুন্দরীদের পাশ কাটিয়ে চলতে পারেন৷
উল্লেখ্য, শরীরে স্বল্পমাত্রায় কোট্রিসলের প্রবাহ ক্ষতিকর নয়৷ বরং তা মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক৷ কিন্তু বেশীমাত্রায় কোট্রিসলের প্রবাহ হৃদযন্ত্রের ক্ষতি থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস এমনকি পুরুষকে নপুংসক পর্যন্ত করে ফেলতে পারে৷ তাই, সম্ভব হলে সুন্দরীদের এড়িয়ে চলাই সমাচীন!

অতিরিক্ত ডায়েটিং হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করে

ওজন মাপার যন্ত্র দ্রম্নত হালকা পাতলা দেহের অধিকারী হওয়ার জন্য নাওয়া খাওয়া ছেড়ে ডায়েটিং যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। তবে এভাবে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়ার বিপদ রয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে উপোস থাকার অভ্যাস করেছেন যারা তাদের ডায়বেটিস, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশ বেড়ে যায়। দেখা গেছে যারা ক্যালরি বা খাদ্যশক্তি নিয়ন্ত্রিতভাবে গ্রহণ করেন তাদের শরীরে উদ্বেগজনকহারে স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়। কর্টিসল নামের এই হরমোন বেড়ে গেলে ডায়েট করার পরও ওজন বাড়তে থাকে। তাই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে যারা ডায়েট করছেন তাদের সতর্ক হবার সময় এসেছে। ডায়েটে ওজন কমে কথাটা মিথ্যে নয়। কিন্তু ডায়েট দীর্ঘদিন চালিয়ে গেলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে স্ট্রেস হরমোন বাড়ার পাশাপাশি মসত্মিষ্কের সমস্যাও দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল পত্রিকায় এ সম্পর্কিত গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ১২১ জন নারীর উপর গবেষণা চালিয়ে এই তথ্য পান।

দেখা গেছে, যারা কঠোর ডায়েটিং করেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও দিন দিন অবনতি ঘটে। সর্বৰণ ক্যালরির হিসেব নিতে গিয়ে মানসিক চাপের শিকার হন তারা। কী খাবেন কেন খাবেন খেলে শরীরের উপকার হবে কী-না এই ধরনের ভাবনা চিনত্মা তাদের মধ্যে স্ট্রেসের জন্ম দেয়। ওজন কমলো কী কমলো না এটা বড় কথা নয়। ডায়েট করলেই কর্টিসল হরমোন বেড়ে যাবে এবং তার ফলে তৈরি হবে মারাত্মক মানসিক চাপ। আবার ক্রমাগত স্ট্রেসে ভুগলে একজন মানুষের ওজন বাড়বে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ওজন বাড়ার কারণে ডায়বেটিস, হৃদযন্ত্রের ধমনী সংকোচন, রক্তচাপ এমনকী ক্যান্সারও হতে পারে।

গবেষণায় যেসব নারী অংশ নিয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন এই গবেষণায় তাদের দুটো দলে ভাগ করা হয়েছিল। প্রথম দলকে দৈনিক ১২০০ ক্যালরি খাদ্যশক্তি গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল, দ্বিতীয় দলকে বলা হয়েছিল ২০০০ (দুই হাজার) ক্যালরি গ্রহণ করতে। তিন সপ্তাহের এই প্রকল্পের কয়েকদিন অতিক্রানত্ম হওয়ার পর উভয় দলের নারীদের লালার নমুনা পরীৰা করা হয়েছিল। দেখা গেছে প্রথম দলের নারীদের মধ্যে কর্টিসল, হরমোনের মাত্রা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। অপরদিকে দ্বিতীয় দলের নারীদের তার মাত্রা ৰেত্রে তেমন বাড়েনি। ফলে যারা কম পরিমাণ খাবার খেয়েছে তারা বেশি স্ট্রেসে ভুগেছে এমনটাই উঠে এসেছে পরীৰায়। এই গবেষণার পর ডায়েট যে স্বাস্থ্যের জন্য হিতে বিপরীত হচ্ছে তা অনুধাবন করবে সকলে। অনত্মত বিজ্ঞানীদের সেটাই প্রত্যাশা।

এবার সস্তায় মিলবে সৌরবিদ্যুত

পৃথিবীতে ১ ঘণ্টায় যত সৌরশক্তি সূর্যালোক বহন করে আনে তার সিকি শতাংশও আমরা ব্যবহার করতে পারি না। দেখা গেছে, পৃথিবীর মানুষ এক বছরে যতটুকু সৌরশক্তি ব্যবহার করে তা এক ঘণ্টার জমা হওয়া সৌরশক্তির চেয়েও কম। প্রচলিত সোলার ব্যাটারিগুলোতে ব্যবহৃত হয় সিলিকন নামের এক ধরনের সেমিকন্ডাক্টর জাতীয় পদার্থ। সিলিকন অন্য যেকোনো জ্বালানির চাইতে ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি ব্যয়বহুল বলে সোলার ব্যাটারি আজো মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তাই গবেষণা চলছে এমন এক সৌরবিদু্যৎ কোষ উদ্ভাবনের যা হবে দক্ষ কিন্তু দামে সস্তা । কানাডার মন্ট্রিয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপক বেনোইট মারসান সৌরবিদু্যৎ কোষের এই পুরানো সমস্যার সমাধানের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ও তার গবেষকদল জানিয়েছেন সস্তায় কিন্তু কার্যকর ও উন্নত সৌরবিদু্যৎ কোষ এখন মানুষের হাতের নাগালে। তাদের এই গবেষণা 'জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি (জেএসিএস)' এবং 'নেচার কেমিস্ট্রি' নামের দু'টি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

সুইস গবেষক মাইকেল গ্রেটজেল ৯০ দশকের শুরুর দিকে সৌরবিদু্যৎ কোষ তৈরির কাজে হাত দেন। উদ্ভিদের সালোকসংশেস্নষণ পদ্ধতিকে অনুসরণ করে তিনি হাজির করেন অভিনব এক ব্যাটারির মডেল। সালোকসংশেস্নষণ প্রক্রিয়ায় আলোর উপস্থিতিতে উদ্ভিদ ক্লোরোফিলকে ব্যবহার করে পানি ও কার্বন ডাই অক্সাইডের সাহায্যে তৈরি করে শর্করা।
সূর্যের আলোক ক্লোরোফিল কণার সাহায্যে উদ্ভিদ যেভাবে শক্তিতে রূপানত্দর করে গ্রেটজেলও সেভাবেই সূর্যালোক থেকে বিদু্যৎ উৎপাদনের কথা ভাবলেন।

এজন্য তিনি ব্যবহার করলেন সাদা একটি রঞ্জক পদার্থ এবং টাইটেনিয়াম ডাই অক্সাইড যা সূর্যলোক শোষণ করবে ক্লোরোফিলের মতই। সাধারণ বিদু্যৎ কোষ বা ব্যাটারির মত গ্রেটজেলের ব্যাটারিতে অ্যানোড ও ক্যাথোড প্রানত্দ রয়েছে। অ্যানোড প্রানত্দে ব্যবহার করা হয়েছে টাইটেনিয়াম ডাই অক্সাইড এবং ক্যাথোড প্রানত্দে ব্যবহার করা হয়েছে পস্নাটিনাম। ভাবা হয়েছিল এটা হবে খুবই কার্যকর ও উন্নত একটি সোলার ব্যাটারি। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে এটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হল এতে পস্নাটিনামের মত দুর্লভ ও দামী ধাতু ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে যা সস্তা ব্যাটারি তৈরির অন্তরায়। অধ্যাপক মারসান গত কয়েক বছর ধরেই গ্রেটজেলের সৌরবিদু্যৎ কোষের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছিলেন। গ্রেটজেলের ব্যাটারির আরো যে সমস্যা ছিল তা হল এর কিছু উপাদান ছিল ক্ষয়িষ্ণু এবং সূর্যের আলো থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুতকে শক্তিশালী বিদ্যুতে পরিণত করতে অক্ষম ছিল এটি। বর্তমানে মারসান এবং তার সহকর্মীরা পরীৰাগারে জেল জাতীয় এমন এক পদার্থ আবিষ্কার করেছেন যা ৰয় হবে না এবং সৌরবিদ্যুতের ভোল্টেজ দ্রম্নত বৃদ্ধি করবে। তাছাড়া পস্নাটিনামের মত দামি ধাতুর বদলে তারা ব্যবহার করেছেন কোবাল্ট সালফেট। এতে তারা সফলও হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। মারসানের কথা ঠিক হলে সস্তা এই ব্যাটারিতে বন্দি হবে সূর্যের আলো। পরিণত হবে দূষণহীন মূল্যবান বিদ্যুতে ।

‘লাকি সেভেন’ কথাটি কীভাবে এসেছে?

আমরা জানি, সূর্যের আলো সাতটি রঙের সমাহার। এই রঙগুলোর প্রথম অক্ষর পরপর সাজিয়ে বলা হয় ‘বেনীআসহকলা’ অর্থাৎ বেগুনি, নীল, আসমানি ইত্যাদি। ইংরেজিতে বলে ‘VIBGYOR’। এখানে ৭ সংখ্যাটি তাৎপর্যপূর্ণ। সেই প্রাচীন কাল থেকেই সাত দিনে সপ্তাহের হিসাব চালু হয়েছে। আমরা আরও জানি, বিশ্বের ‘সপ্ত আশ্চর্য’-এর কথা। তা ছাড়া, সাত সমুদ্র, সাত মহাদেশ এবং সর্বোপরি ‘সাত ভাই চম্পা’—এগুলো সবই ৭-এর মাহাত্ম্য প্রকাশ করে। প্রাচীন কাল থেকে মানুষের ধারণায় ৭ সংখ্যাটি সৌভাগ্যের প্রতীক বলে চিহ্নিত হয়েছে বলেই হয়তো এতগুলো ঘটনায় বারবার ৭ সংখ্যাটির আবির্ভাব ঘটেছে। ঠিক কী কারণে ৭ সংখ্যাটি সৌভাগ্যের প্রতীক বলে সবাই গ্রহণ করে নিয়েছে, তা বলা কঠিন। তবে গ্রিক দার্শনিক ও গণিতবিদ পিথাগোরাসের (খ্রি.পূর্বাব্দ ৫৭০—৪৯৫) অনুসারীদের মতে, ৭ একটি সম্পূর্ণ বা নিখুঁত সংখ্যা (পারফেক্ট নাম্বার), কারণ ৩ ও ৪ এর যোগফল ৭। তাদের হিসাবে ত্রিভুজ ও বর্গক্ষেত্র হলো নিখুঁত জ্যামিতিক চিত্র এবং তাদের বাহুর সংখ্যা ওই ৩ ও ৪। হয়তো প্রাচীন এই ধারণা থেকে ৭ সংখ্যাটি সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে চালু হয়ে গেছে। লুডু খেলার ছক্কা-গুটিতে যে সংখ্যাগুলো থাকে, তার মধ্যে একটি ছন্দ আছে। দুই বিপরীত পাশের অঙ্কগুলো যোগ করলে সবসময় ৭ হয়। যেমন, যে পিঠে ৫ তার অপর পিঠে থাকে ২, যে পিঠে ৬, তার অপর পিঠে ১, যে পিঠে ৩, তার অপর পিঠে ৪, ইত্যাদি। কোনো কোনো খেলায় একসঙ্গে দুটি গুটির চাল দিয়ে মোট ৭ পয়েন্ট পেলে পুরস্কার পাওয়া যায়। এ জন্য ওইসব খেলায় ৭ একটি সৌভাগ্যের প্রতীক বলে গণ্য হয়। এভাবেই হয়তো লাকি সেভেন কথাটির চল হয়েছে।

সর্দারজির কৌতুক

• সর্দারজি ঘোড়ায় চড়ে শহরে গেছেন। গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপর দিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে যাচ্ছেন তিনি। একসময় রাস্তার সিগন্যাল বাতিকেও উপেক্ষা করে সামনে এগোতে লাগলেন। এটা দেখে পুলিশ বাঁশি বাজিয়ে তাঁকে থামিয়ে বলল, ‘সিগন্যাল মানেননি কেন? আপনাকে থানায় যেতে হবে, চলুন।’ সর্দারজি অবাক হয়ে বললেন, ‘আরে মশাই, আপনার কাজ হলো সিগন্যাল না মানলে গাড়ি-ঘোড়ার নম্বর লিখে সেই নম্বরে মামলা ঠুকে দেওয়া। তা আপনি ঘোড়ার পেছনে নম্বর দেখে মামলা করে দেন। আমাকে অযথা থানায় যেতে বলছেন কেন? আপনি তো দেখছি আচ্ছা পুলিশ, নিজেই নিয়ম মানেন না!’

• সর্দারজির স্ত্রী এক সকালে সর্দারজির ওপর মহাখাপ্পা। সর্দারজি বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হয়েছেটা কী, শুনি? সকালবেলা রাগারাগি করছো কেন? সর্দারজির স্ত্রী চিৎকার করে বললেন, ‘তোমার পকেটে “বাসন্তী” লেখা কাগজ পেলাম কেন?’
সর্দারজি বললেন, ‘আরে, এই কথা! আমি কাল যে ঘোড়াটি কিনেছি, তারই নাম তো বাসন্তী!’ কিছুদিন পর আবারও সর্দারজির স্ত্রী তাঁর ওপর রাগারাগি শুরু করলেন। সর্দারজি বললেন, ‘আজকে আবার কী হলো?’ সর্দারজির স্ত্রী ঝামটা মেরে বললেন, ‘তেমন কিছু হয়নি। বোধহয় আজকে তোমার বাসন্তী নামের ঘোড়াটি ফোন করেছে। নাও, ঘোড়ার সঙ্গে কথা বলো।’


• বিমানে দিল্লি থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে ১৫ মিনিট পর ক্যাপ্টেন ঘোষণা করলেন, ‘আমাদের একটি ইঞ্জিন নষ্ট হয়েছে। চিন্তার কিছু নেই, এখনো আমাদের তিনটি ইঞ্জিন সচল আছে। হয়তো পৌঁছাতে সময় এক ঘণ্টা বেশি লাগতে পারে।’
৩০ মিনিট পর ক্যাপ্টেন আবারও একই ঘোষণা দিয়ে জানালেন, ‘আরও একটি ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেছে। এবার পৌঁছাতে আরও দুই ঘণ্টা বেশি লেগে যাবে।’
ঠিক এক ঘণ্টা পর আবারও ঘোষণা এল—আরও একটি ইঞ্জিন নষ্ট হয়েছে। তবে সর্বশেষ ইঞ্জিনটি এখনো সচল আছে। তাই পৌঁছাতে আরও তিন ঘণ্টা সময় বেশি লাগতে পারে।
এবার সর্দারজি তাঁর পাশের সিটের ব্যক্তিকে ডেকে বললেন, ‘দাদা, এই সর্বশেষ ইঞ্জিনটি নষ্ট হলে মনে হয় আজ সারা দিন এই আকাশে ভাসতে হবে, তাই না?’


• ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সর্দারজি একটি গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু গাড়ি কেনার পর থেকে সেই ঋণের টাকা পরিশোধের আর কোনো নাম নেই তাঁর। অনেক তাগাদা দেওয়ার পরও টাকা পরিশোধ না করায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একদিন সর্দারজির গাড়িটি নিয়ে যায়। এটা দেখে সর্দারজির বন্ধু বললেন, ‘কি রে, তোর গাড়ি তো গেল!’
‘আরে ধুর, বলিস না! আগে জানলে তো আমি বিয়ের জন্যও ঋণ করতাম, বোধকরি সেটাই ভালো হতো’—সর্দারজির জবাব।


• জেলখানায় সর্দারজি ও পুলিশের মধ্যে কথোপকথন—
পুলিশ: ফাঁসির আগে তোমার কি কোনো শেষ ইচ্ছা আছে? আজকে তোমার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করা হবে।
সর্দারজি: হুম, একটা ইচ্ছা আছে।
পুলিশ: কী সেই ইচ্ছা?
সর্দারজি: আমার পা ওপরে আর মাথা নিচে রেখে যেন ফাঁসিটা দেওয়া হয়!

সর্দারজি রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। রাস্তার ওপরে বিদ্যুতের তারে একটি পাখি বসে আছে। একসময় পাখিটি মল ত্যাগ করামাত্র সোজাসুজি তা সর্দারজির মাথার ওপর গিয়ে পড়ল। এটা দেখে সর্দারজি আশপাশে তাকালেন কেউ দেখেছে কি না, তা বুঝতে। তারপর মনে মনে বলতে লাগলেন, ‘তাও ভালো যে, গরু উড়তে পারে না, আর তারের ওপরও বসতে পারে না।’

• সর্দারজি ও সান্তা বিয়ে নিয়ে কথা বলছেন—
সান্তা: আচ্ছা, তুমি বিয়েটা করে ফেলছো না কেন?
সর্দারজি: আমি আসলে আমার মতোই আদর্শবান একজনকে খুঁজছি।
সান্তা: তাহলে সে রকম কাউকে খুঁজে পাওনি?
সর্দারজি: তা একজনকে পেয়েছি বৈকি...।
সান্তা: তাহলে সমস্যা কোথায়?
সর্দারজি: আরে, সে তো আবার তার আদর্শের মতোই আরেকজনকে খুঁজছে।


• সর্দারজি গেছেন টেলিভিশন কিনতে—
সর্দারজি: আচ্ছা, আপনাদের এখানে রঙিন টেলিভিশন আছে?
বিক্রেতা: হুম, আছে। তা কোন কোম্পানির টেলিভিশন দেখাব?
সর্দারজি: অত কিছু বুঝি না। আমার রঙিন টেলিভিশন চাই। আর যেনতেন রং হলে হবে না। সবুজ রঙের টেলিভিশন দেখান।

পৃথিবীর কক্ষপথের পরিবর্তনই বদলে দিচ্ছে জলবায়ুর আচরণ !

পৃথিবীর কক্ষপথের অতি গোলাকার বা অতি উপবৃত্তাকার পরিবর্তনই বরফ যুগের সূচনা করেছিল –ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রের সানত্দা বারবারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ লোরেইন লিসিয়েকি এবার পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী করলেন পৃথিবীর কক্ষপথের পরিবর্তনকে। তার মতে, মানবসৃষ্ট কারণতো বটেই প্রতি ১ লক্ষ বছরে পৃথিবীর কক্ষপথে যে পরিবর্তন আসে তাও পাল্টে দিচ্ছে পৃথিবীর জলবায়ু। বিগত ১ কোটি ২০ লক্ষ বছর যাবৎ পৃথিবীর জলবায়ু ও সূর্যের চতুর্দিকে ঘূর্ণনের পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা চালানোর পর এই সিদ্ধানত্দে উপনীত হন তিনি।

বর্তমান সময়ে বসে লিসিয়েকি কী করে জেনেছিলেন ১ কোটি ২০ লক্ষ বছর আগের পৃথিবীর কথা সে ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। লিসিয়েকির মত ভূতত্ত্ববিদেরা পৃথিবীর জলবায়ুর অতীত আচরণ জানার জন্য সমুদ্রের তলদেশে জমা হওয়া পলি বা তলানী নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এর ফলে তারা সহজেই বলতে পারেন অতীতে কেমন ছিল পৃথিবীর জলবায়ু। নিখুঁত বৈজ্ঞানিক তথ্যউপাত্ত ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে লিসিয়েকি জানাচ্ছেন প্রতি এক লক্ষ বছরে কেবল পৃথিবীর কক্ষপথেরই পরিবর্তন ঘটে না বরং পৃথিবীর জলবায়ুও পাল্টে যায় এই বিবৃতিটুকুতে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের সমুদ্রের তলদেশ থেকে সংগৃহীত প্রায় ৫৭টি নমুনা বিশেস্নষণ করে তিনি বলেন, 'পৃথিবীতে বরফযুগের সূচনা হয় এক লক্ষ বছর পর পর। অদ্ভুৎ বিষয় হয় ঠিক এই সময় পরপর পৃথিবীর কক্ষপথেও আসে পরিবর্তন। এই সময় পৃথিবীর কক্ষপথ হয়ে দাঁড়ায় অতি গোলাকার বা অতি উপবৃত্তাকার। এক লক্ষ বছর পরপর কক্ষপথের এই পরিবর্তনকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন পৃথিবীর উৎকেন্দ্রিক আচরণ। পৃথিবীর উৎকেন্দ্রিক আচরণের সঙ্গে যে বরফযুগের সূচনার সম্পর্ক করেছে তা প্রায় প্রমাণিত।'


তবে কেবল পৃথিবীর কক্ষপথই যে জলবায়ুকে প্রভাবিত করছে এমন নয়। লিসিয়েকি জানান, উভয়ই উভয়কে প্রভাবিত করছে। অর্থাৎ বড় ধরনের জলবায়ু পরিবর্তনও সূচিত করে কক্ষপথের পরিবর্তন। তিনি পরীৰা করে দেখেছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হীমযুগের সূচনা যেবার হয়েছিল সেবার পৃথিবীর কৰপথেও সামান্য পরিবর্তন ঘটেছিল। অর্থাৎ প্রভাবটা হয় উভয়মুখী।

হোজ্জার গল্প

হোজ্জা তাঁর বন্ধুকে চিঠি লিখছিলেন। একজন উৎসুক প্রতিবেশী চুপিচুপি হোজ্জার পেছনে এসে চিঠিতে কী লেখা হচ্ছে, তা পড়তে থাকে। এদিকে হোজ্জার সামনে ছিল একটা আয়না। ওই আয়নাতেই হোজ্জা লোকটাকে দেখতে পেলেন। তিনি পুরো ব্যাপারটা পাত্তা না দিয়ে চিঠি লিখতে লাগলেন: ‘অনেক কিছুই লেখার ছিল। কিন্তু পারলাম না। ঠিক এই মুহূর্তে একজন অভদ্র ও নির্লজ্জ লোক আমার পেছনে দাঁড়িয়ে চিঠি পড়ছে’ লোকটা রেগেমেগে অভিযোগ করল, ‘হোজ্জা, আপনি এসব কী লিখছেন? আমি কখন আপনার পেছনে দাঁড়িয়ে চিঠি পড়েছি?’ জবাবে হোজ্জা বললেন, ‘তুমি যদি আমার পেছনে দাঁড়িয়ে চিঠি না পড়তে, তাহলে জানলে কী করে চিঠিতে আমি কী লিখেছি?’

অনলাইন নেটওয়ার্কিং স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ

ইন্টারনেটে সামাজিক ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের জন্য খবরটা তেমন সুখকর নয়। ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে বলে একজন বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন। এরিক সিগম্যান নামে ওই মার্কিন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের সঙ্গে অন্যদের সম্মুখ যোগাযোগ কমে যায়। এর ফলে তারা ক্যানসার, স্ট্রোক, হূদরোগ ও মতিভ্রষ্ট হওয়ার মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

মনোবিজ্ঞানী সিগম্যান জানান, অনলাইন নেটওয়ার্কিংয়ের ফলে সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর প্রভাবে মানুষের মধ্যকার সরাসরি যোগাযোগ বিনষ্ট হচ্ছে। তিনি আরও জানান, পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মতো ‘সত্যিকারের’ সামাজিক যোগাযোগের অভাবে মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মানুষের মধ্যে সম্মুখ যোগাযোগ না হলে বংশগতির ধারা, ধমনির কার্যকারিতা ও হরমোনের স্বাভাবিক ধারা প্রভাবিত হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে স্বাভাবিক আচার-আচারণ ও মানসিক অবস্থা। শারীরিকভাবে ক্ষতি করার পাশাপাশি অনলাইন নেটওয়ার্কিং মানুষের সামাজিক জীবনেও প্রভাব ফেলে উল্লেখ করে সিগম্যান জানান, ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে মানুষ ‘সামাজিকভাবে’ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। ওয়েবসাইট ব্যবহারের কারণে মানুষের সামাজিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়া উচিত ছিল এবং মানুষের সামাজিক জীবন আরও সুন্দর হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এর উল্টো। সামাজিক ওয়েবসাইট ব্যবহারের ফলে মানুষে মানুষে যেখানে সামাজিক সম্পর্ক আরও জোরদার হওয়া উচিত, সেখানে উল্টো তা দিনদিন কমে যাচ্ছে। ইনস্টিটিউট অব বায়োলজি থেকে প্রকাশিত সাময়িকী বায়োলজিস্ট-এ সিগম্যান তাঁর এসব মতামত তুলে ধরেন। সেখানে একটি গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি জানান, ১৯৮৭ সাল থেকে মানুষের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের মাত্রা আশংকাজনকহারে কমে গেছে। ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের প্রসারের কারণেই এমনটি ঘটেছে। সিগম্যান জানান, সম্মুখ যোগাযোগের সময় মানুষের শরীরিক যে পরিবর্তন হয়, ই-মেইল লেখার সময় তেমনটি দেখা যায় না। ‘সরাসরি’ যোগাযোগের সময় মানুষের মধ্যে ব্যতিক্রম কিছু পরিবর্তন ঘটে, তবে সাদাচোখে এই পরিবর্তন না-ও দেখা যেতে পারে। সিগম্যান আরও জানান, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম ব্যবহারের ফলে মানুষের সামজিক দক্ষতা কমে যায়। অন্যের শারীরিক ভাষা বোঝার মতো সামর্থ্য তার থাকে না। তিনি এ-ও জানান, সামাজিক ওয়েবসাইটের কারণে ব্রিটেনের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। অন্য মানুষের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগের ‘সময়’ উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। গত দুই দশকের মধ্যে ‘কারও সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে’ এমন লোকের সংখ্যা তিন গুণ কমেছে। ইন্টারনেটে সামাজিক ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের এমন নানা নেতিবাচক দিক তুলে ধরে সিগম্যান জানান, বিষয়টি কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে তা ভেবে তিনি গভীর ‘উদ্বিগ্ন’। তিনি এ-ও বলেন, ‘সামাজিক ওয়েবসাইটের নেতিবাচক দিক তুলে ধরায় কেউ যেন আমাকে সেকেলে ভেবে না বসেন। কেউ যেন না ভাবেন যে আমি নতুন প্রযুক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু এটাও সত্য, মানুষের জীবন সুন্দর ও উন্নত করাই প্রতিটি প্রযুক্তির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।’

অনেকে দুধ খেতে পারে না কেন?

দুধ শিশুদের জন্য আদর্শ খাদ্য। কিন্তু অনেক শিশুর দুধে অ্যালার্জি থাকে। তারা দুধ সহ্য করতে পারে না, বারবার বমি হয়, এমনকি ডায়রিয়াও হতে পারে। দুধের মূল চিনিজাতীয় উপাদান হলো ল্যাকটোজ। এই পুষ্টিকর উপাদানটি পরিপাকের জন্য মানুষের শরীর ল্যাকটেজ নামের বিশেষ এনজাইম তৈরি করে। ল্যাকটোজের রাসায়নিক গঠন ভেঙে শরীরে পুষ্টি গ্রহণে সহায়তা করাই ল্যাকটেজের প্রধান কাজ। সাধারণত সব মানুষের শরীরেই ল্যাকটেজ তৈরি হয়। যেসব শিশুর দেহে এই এনজাইম তৈরি হয় না, তাদের সমস্যা দেখা দেয়। তারা যেহেতু দুধ সহ্য করতে পারে না, তাই তাদের মলে অজীর্ণ ল্যাকটোজ থেকে যায়। একটি সহজ পরীক্ষা, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স টেস্টের সাহায্যে এটা বের করা যায়। তবে দুই থেকে তিন সপ্তাহ দুধ খাওয়া বন্ধ রেখে যদি উপকার পাওয়া যায়, তাহলেও বোঝা যাবে সমস্যাটা দুধে। শিশুদের জন্য প্রচুর ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি প্রয়োজন, যা দুধে থাকে। দুধে অ্যালার্জি হলে বিকল্প হিসেবে সয়া দুধ খেতে হবে। এসব ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। অনেক সময় শৈশবে সমস্যা না থাকলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুধে অ্যালার্জি দেখা দেয়। এর একটি কারণ হলো, ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সে কারও কারও শরীরে ল্যাকটেজ তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। বৈজ্ঞানিকেরা এর কারণ বের করার চেষ্টা করছেন। কোন বিশেষ জিন ও প্রোটিনের কারণে ল্যাকটেজ তৈরি বন্ধ হয়ে যায়, তা বের করতে পারলে জিন টেকনোলজির মাধ্যমে এর প্রতিকার বের করা সম্ভব। সহ্য হয় না বলে যে দুধ খাওয়া একেবারে ছেড়ে দিতে হবে, তা নয়। অনেকে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে দুধ খেয়ে শরীরে সহনীয় করার চেষ্টা চালিয়ে সফল হয়েছেন। সরাসরি দুধের পরিবর্তে দুধের তৈরি ছানা, পনির প্রভৃতি খাওয়া যেতে পারে। দুধের জিনিস হলেও এসব খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়ায় কিছু ল্যাকটোজ অণু ভেঙে যায়, যে কারণে ওই সব খাদ্য শরীর সহজে গ্রহণ করতে পারে।

মরিচ তো নয় যেন ‘আগুনের গোলা’

মরিচটি মুখে দেওয়া মাত্র আগুনের জ্বালা অনুভূত হবে। এ জ্বালা সর্বোচ্চ প্রতিষেধক ওষুধ, দুধ বা মিষ্টি কোনো কিছু দিয়েই দূর করা সম্ভব নয়। ভারতের ভোট জোলোকিয়ার চেয়েও এ মরিচের ঝাল বেশি। মুখে দিলে নিশ্চিত হাসপাতালে ছুটতে হবে। ব্রিটেনের লিঙ্কোশায়ার কাউন্টিতে নতুন উদ্ভাবিত এ মরিচের নাম ‘ইনফিনিটি’।

পূর্ব ইংল্যান্ডের কাউন্টি শহর লিঙ্কোশায়ারের গ্রান্থাম নগরে ইনফিনিটি মরিচের উদ্ভাবন। এ মরিচ উৎপাদনকারী কৃষক উডি উডস বলেন, ‘ইনফিনিটি খাওয়া মানে জ্বলন্ত কয়লা মুখে নেওয়া। ইংল্যান্ডের মতো জলবায়ুতে তীব্র ঝালের এ মরিচের উৎপাদন সত্যিই অবিশ্বাস্য।’
ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা ইতিমধ্যে এ মরিচের গুণাগুণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তাঁরা ইনফিনিটি মরিচের স্কভিল স্কেল (মসলার ঝাল পরিমাপের একক) নির্ধারণ করেছেন এক লাখ ৬৭ হাজার ২৮৬। আর ভারতে উৎপাদিত ভোট জোলোকিয়ার স্কভিল স্কেল হলো এক লাখ ৪১ হাজার ৪২৭। তীব্র ঝাঁজের বিবেচনায় ইনফিনিটি মরিচের অবস্থান এখন সবার ওপরে। আগে এ রেকর্ডের মালিক ছিল ভোট জোলোকিয়া। অ্যানানোভা।

থাকে দুচোখ খোলা

ঘুমিয়ে পড়ি আমি
থাকে দুচোখ খোলা,
আজকে নাহয় নীল আকাশে
স্বপ্ন থাকুক তোলা।

স্বপ্ন শুধুই ভিড় করত
চোখের পাতায় এসে,
একনিমেষে ভাসিয়ে নিত
কোথায় কোন বা দেশে?

নাই বা হলো সওয়ার হওয়া
পঙ্খিরাজের পিঠে,
চোখ দুটোকে ফাঁকি দিলাম
কেমন কড়া মিঠে!

সত্যিকারের সবজান্তা

মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন
বাঘ
প্রতিটি বাঘের গায়ের ডোরাকাটা দাগ অন্য বাঘের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। একটি বাঘের গায়ে মোটামুটি শখানেক ডোরাকাটা দাগ থাকে।
বিজ্ঞানীরা এ যাবত্ নয়টি উপ-প্রজাতি বাঘ শনাক্ত করেছেন। এরা হলো বেঙ্গল, ইন্দো-চায়নিজ, মালয়ান, সুমাত্রান, সাইবেরিয়ান এবং চায়না। দুটি প্রজাতি বালিয়ান এবং ক্যাম্পিয়ান ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে।
সাইবেরিয়ান বাঘ আকারে সবচেয়ে বড়। লম্বায় প্রায় ২৭০-৩৩০ সে.মি. উচ্চতায় ১০৭-১১০ সে.মি.এবং ওজনে প্রায় ৩০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বাঘের গর্জন প্রায় এক মাইল দূর থেকে শুনতে পাওয়া যায়।
বাঘ তার মূত্র দ্বারা অথবা গাছের গায়ে আঁচড়ের মাধ্যমে নিজের এলাকা চিহ্নিত করে।
বাঘের পায়ের টেন্ডন (শক্ত তন্তু, যা মাংসপেশি হাড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে) এতটাই শক্তিশালী যে গুলি খেয়ে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দাড়িয়ে থাকতে পারে।
বাঘ প্রতিদিন ৬ কেজি মাংস খায়। তবে কোনো কিছু না খেয়ে সপ্তাহখানেক বেঁচে থাকার ক্ষমতা বাঘের আছে।
শিকার ধরার সময় সাধারণত বাঘ তার পায়ের আঙুলে দাঁড়িয়ে হাঁটে। এ ছাড়া কোনো কোনো প্রজাতির বাঘ লাফ দিয়ে ৩৩ ফুট পর্যন্ত যেতে পারে।
বাঘের মুখের লালা জীবাণুনাশক। তাই বাঘ আহত হলে ক্ষতস্থানে মুখের লালা ব্যবহার করে।
বাঘের গায়ের ডোরাকাটা দাগগুলো ছদ্মবেশ হিসেবে শিকার কিংবা শত্রুর চোখকে ধোঁকা দিতে বেশ কাজে লাগে। বাঘের গায়ের সব লোম ফেলে দিলেও ডোরা কাটা দাগগুলো থেকে যাবে।
বাঘের বেশ কিছু ফসিল আছে, যা প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর পুরোনো।

লটারি

এক ব্যাক্তি গ্রাম খেকে শহরে আসলেন বড় লোক হওয়ার আশায় । গ্রামের বাড়িতে তার পেশা ছিল (সাপুড়ে) সাপের খেলা দেখানো । শহরে এসে দেখলেন রাস্তার পাশে পাশে লোকজন ভিড় করে আছে, অনেক কষ্ট করে একটা ভিড়ের মধ্যে গেলেন । কবিরাজদের ব্যবসা, তিনি অনেক ক্ষণ দেখলেন এবং তাদের গিরে থাকা লোকজনের ভিড় দেখে সে শহরে ও সাপের খেলা দেখাবে সিদ্ধান্ত নিলেন । কিন্তু গ্রাম থেকে আসার সময় সংগে করেতো সাপ আনা হলো না । সাপের খেলা দেখাবে কি করে । সংগে করে কিছু টাকা পয়সা ছিল, সেগুলো দিয়ে সাপ কেনার জন্য অনেক খোজা খোজির পর এক সাপ বিক্রেতা পেলেন । সাপ খরিদ করার জন্য ১০০০/- টাকা বায়না দিল । পরদিন এসে নিয়ে যাবে ।
তার সাপ লড়ায় করার জন্য ছিল অত্যান্ত পারর্দশী । বিভিন্ন বাজিকারদের সাথে বাজি ধরেন । তদ্রুপ একটা বাজিতে ভাগ্য ক্রমে হেরে গেলেন এবং সাপের মৃত্যু ঘটল । গ্রাম্য লোকটি সাপ নিতে আসলে বেক্রেতা তাকে জানালেন, রাতে সাপ আর বেজির লড়ায়ে সাপের মৃত্যু ঘটেছে । লোকটি তার বায়না টাকা ফেরত চাইলে বিক্রেতা তা দিতে অস্বীকার করে । এবং তাদের মাধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি হয় । এক পর্যায়ে গ্রাম্য লোকটি বললেন - ঠিক আছে আমাকে মৃত সাপটি পেকেট করে দিন । কিছু দিন পর সাপ বিক্রেতার সাথে দেখা হল এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন মৃত সাপটি আপনি কি করলেন । তখন লোকটি জবাব দিলেন ঐটা থেকে আমি ৯৯৮ টাকা উঠিয়ে নিয়েছি । লোকটি হতবাক হয়ে বললেন কি করে সম্ভব । গ্রাম্য লোকটি তাকে জানালেন -
মৃত সাপের বক্মটি হাতে নিয়ে হাটতে হাটতে চিন্তা করলাম কি করা যায় । হাটতে হাটতে কিছু দূর যাওয়ার পর মাথায় একটা বুদ্ধি আসল । সাপটি কে প্রাইজ ঘোষনা ৫০০টি টিকিট রাস্তার পাশে প্রতি টিকে ২/- টাকা বিক্রি শুরু করলাম ।
লোকটি বললেন - কেউ কোন অভিযোগ করেনি ।
জবাবে বললেন - হ্যাঁ করছিল একজন, যে লটারি জিতেছিল । তাকে তার ২ টাকা ফেরত দিয়ে দিলাম ।