RSS

শুচিবাই থেকে দূরে থাকুন

পৃথিবীজুড়ে হাজারো মানুষ ভুগছেন শুচিবাই রোগে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এ রোগের নাম 'অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার' বা 'ওসিডি'। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠারই ভিন্ন রকম বহিঃপ্রকাশের নাম 'ওসিডি'। এ রোগে আক্রান্তরা বারবারই বাজে চিন্তায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও একই কাজ করে যান বারবার। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সিমা হিঙ্গোরানি বলেন, 'এই রোগের উপসর্গ মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে। তীব্র মাত্রায় শুচিবায়ের শিকার কেউ যদি চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হন তবে তার ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও দক্ষতা অনেকখানি কমে যেতে পারে। শিক্ষাঙ্গন, কর্মক্ষেত্র কিংবা বাড়িতে কাজের ৰেত্রে এর বড় প্রভাব পড়তে পারে।'

শুচিবাই বা ওসিডিতে আক্রান্ত মানুষরা সবসময় নিজের পোশাক পরিচ্ছদের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে চিন্তিত থাকে। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নিয়ে বাড়াবাড়ি বাতিকের পর্যায়ে চলে যায়। এরা ঘন ঘন হাত ধোয়, গোসল করে তবু ময়লা এবং জীবাণুর ভয়ে ভীত থাকে। মোট কথা সদা সতর্ক অবস্থায় থাকে এ ধরনের মানুষ। অনেকের দাম্পত্য জীবনেও এ নিয়ে অশানত্দি দেখা দেয়। একান্ত ঘনিষ্ঠতার সময় এমন রোগে আক্রান্ত স্বামী বা স্ত্রী স্বস্তিবোধ করে না। শয়নকক্ষের দরজা ঠিকভাবে আটকানো হয়েছে কী-না অথবা কেউ তাদের দেখছে কী-না এমন অদ্ভুত দুশ্চিন্তা কাজ করে তাদের মধ্যে। ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো ও অন্যকে আঘাত করার ভয়ে সবসময় ভীত থাকে। তারা নিয়মভঙ্গ হয় কী-না সে দুশ্চিন্তাও সব সময় নিজের মধ্যে বহন করে। কোনো একটা স্থানের বা নিজের বাড়ির কোনো কৰের সাজসজ্জা একটু এলোমেলো দেখলেই অসহায় বোধ করে এরা। ঠিকমত নেভানো হয়েছে কী-না এই বিষয়গুলো তাদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলে।

ঘন ঘন হাত ধোয়া ও দীর্ঘসময় ধরে গোসল করা শুচিবাই বা ওসিডির লৰণ। এরা নিজের কাজকে নিখুঁত করার চেষ্টা করে এবং বারবার অসম্পাদিত কাজের তালিকা তৈরি করে। মাঝে মাঝে একই লেখা বারবার পড়ে কোনো কারণ ছাড়াই। কাউকে কাউকে অতিরিক্ত ধর্মকর্ম বা পূজা-আর্চাও করতে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড. বসন্ত মানদ্রা বলেন, 'এই রোগে আক্রান্ত মানুষজন আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া এরা সব সময়ই নিজের কোনো জটিল রোগ হয়েছে এমনটা ভেবে আতংকে আচ্ছন্ন থাকে।'

ড. জয়তি সাঙ্গেল বলেন, বেকারত্বজনিত মনোদৈহিক চাপ বা স্ট্রেস, কর্মক্ষোত্রে অসাফল্য, সম্পর্কের জটিলতা, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং সনত্দান জন্মদান সংক্রান্ত কারণে শুচিবাই বা ওসিডি বেড়ে যেতে পারে।

শুচিবাইয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত আচরণগত চিকিৎসার মাধ্যমে ওসিডি নিরাময় করা হয়। তাদের সমস্যা অন্য কেউ শুনছে বা ভাগ করে নিচ্ছে এটা বুঝতে পারলে মানসিক বিকার কমে আসবে। নিয়মিত কাউন্সিলিঙের মাধ্যমে এই রোগ ভালো হয়।


দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া অবলম্বনে