RSS

হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে মেনে চলুন ১০টি পরামর্শ

সুস্থ সবল হৃৎপিণ্ড দীর্ঘ জীবনের চাবিকাঠি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ দ্রুত নাগরিক জীবনে বাড়ছে কাজের চাপ ও স্ট্রেস। পাশাপাশি ফাস্টফুড বা দ্রুত খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সিংহভাগ মানুষ। গবেষকরা বলছেন ক্রমাগত স্ট্রেসের মধ্যে থাকলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপের মত শারীরিক উপসর্গ। বর্তমানে তরুণরাও উল্লেখযোগ্য হারে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে স্ট্রেসের পরিমাণ কমানো, ধূমপান ত্যাগ, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। সুস্থ হৃৎপিণ্ডের জন্য ১০টি পরামর্শ মেনে চলার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। এগুলো হল-

ধূমপান ত্যাগ : ধূমপান ১৫ থেকে ২৫ বছর আয়ু কমিয়ে দেয়। যদি কেউ ধূমপায়ী হয় তবে তার হার্ট এটাকের আশংকা অধূমপায়ীর তুলনায় দ্বিগুণ। তবে যখন থেকেই ধূমপানের অভ্যাস কেউ ত্যাগ করবে তখন থেকেই হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যাবে অনেকাংশে।

লবণ কম খাওয়ার অভ্যাস : লবণ রক্তচাপ বাড়ায়। তাই খাবারের সঙ্গে বাড়তি লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে দ্রুত।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস : সুস্থ হৃৎপিণ্ডের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। মাছ, ফল-মূল ও শাক-সব্জি বেশি পরিমাণ খেতে হবে। খুব বেশি শর্করা ও মাংস জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।

মদ্যপান নিষেধ : খুব বেশি মদ্যপান করলে হৃদপেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এছাড়া নিয়মিত মদ্যপানে ওজন বাড়ে ও রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। তাই সুস্থ হৃৎপিণ্ডের জন্য মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।

সক্রিয় থাকুন : ব্যায়াম করম্নন কিংবা শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কাজ করুন প্রতিদিন। সচল ও সক্রিয় না থাকলে শরীরের বিপাক ক্রিয়ার গতি মন্থর হয়ে যায়। ঝুঁকি বাড়ে হৃদরোগের।

রক্তচাপ, রক্তশর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেৰণ করতে হবে।

সুস্থ আছেন কী-না সেটা জানাও জরুরি। হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রসত্দ হওয়ার আগে রক্তচাপ, রক্তশর্করা বা বস্নাড সুগার ও কোলেস্টেরলের মাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। এসব শারীরিক অবস্থা তাই সব সময় পর্যবেৰণ করতে হবে। নিয়মিত চেকআপ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

কোমরের চর্বি কমান : কোমরের মাপ বড় হলে এর চারপাশে চর্বির স্তর পড়লে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই কোমর সরু রাখা জরুরি।

স্ট্রেস কমান : আপনি যখন খুব ব্যস্ত থাকেন তখন নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া না হলেও ধূমপানের পরিমাণ হয়ত বেড়ে যায়। এটা চরম স্ট্রেসের লক্ষণ। স্ট্রেস কমাতে নিয়মিত ৮ ঘণ্টা ঘুম ও যোগ ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

পারিবারিক ইতিহাস জানুন : আপনার পরিবারে যদি হৃদরোগের ইতিহাস থাকে, যদি বাবা মায়ের এই রোগ থেকে থাকে তবে আপনারও এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কাজেই অন্যদের তুলনায় আপনাকে অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে।

হাসুন : হাসি হলো মহৌষধ। হাসতে পারা ও হাসির উপলৰ তৈরি করা জরম্নরি। এতে মন হালকা হয়। স্ট্রেস কমে।


দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া অবলম্বনে

হৃদরোগ ও বিষণ্নতা এক হলে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায় বহুগুণ

হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি সাধারণের তুলনায় বহুগুণ বেশি। কিন্তু এর সঙ্গে যদি বিষণ্নতা যুক্ত হয় তবে মৃতু্যঝুঁকি বেড়ে যায় আরো কয়েকগুণ। সম্প্রতি বেশ কয়েক বছর ধরে ব্রিটিশ ও ফরাসি গবেষকরা প্রায় ৬ হাজার মানুষের উপর গবেষণা চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছেন। গবেষকদের মতে, কেবলমাত্র হৃদরোগে আক্রান্তদের তুলনায় হৃদরোগ ও বিষণ্নতা উভয় রোগে আক্রানত্দদের মৃত্যুঝুঁকি ৪ গুণ বেশি। 'হার্ট জার্নাল' নামের একটি চিকিৎসা সাময়িকীতে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে গবেষকরা প্রায় ৬ হাজার মধ্যবয়স্ক মানুষের ওপর পাঁচ বছর ধরে সমীক্ষা চালিয়েছেন।

'ব্রিটিশ হোয়াইট হল স্টাডির' অধীনে দু'দেশের গবেষকরা এই গবেষণায় অংশ নেন। স্বাস্থ্যের উপর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবকগুলোর প্রতিক্রিয়া জানতে ব্রিটিশ সরকার এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ ও ফ্রান্সের ভার্সাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই গবেষণায় অংশ নেন। প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে চলা এই গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যারা অংশ নিয়েছেন তারা প্রধানত মধ্যবয়সী সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ছিলেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা হৃদরোগে আক্রান্ত তারা সুস্থ মানুষের তুলনায় ৬৭ ভাগ বেশি মৃত্যুঝুঁকিতে থাকেন। কিন্তু এর সঙ্গে যদি বিষণ্নতা যুক্ত হয় তবে মৃত্যুঝুঁকির হার তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের সিনিয়র নার্স এমি হমসন বলেন, 'ইতোপূর্বে বিষণ্নতার সাথে হৃদরোগের সম্পর্ক নিয়ে যে গবেষণা হয়েছিল এই গবেষণা তারই ধারাবাহিকতায় হয়েছে। বিষণ্নতার সাথে এমনিতেই হৃদরোগের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু যদি উভয়রোগের সম্মিলন ঘটে কারো মধ্যে তবে মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।'

এ ধরনের মারাত্মক পরিস্থিতি এড়াতে হলে প্রথমেই নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। বিষণ্নতাকে অবহেলা না করে দ্রম্নত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন তারা। নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও ইতিবাচক ভাবনা পাল্টে দিতে পারে জীবনধারা। চিকিৎসকের পরারর্শ মেনে হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে এমন জীবনাভ্যাস রপ্ত করতে পারলে মৃত্যুঝুঁকি অনেকগুণ কমে যাবে বলে মনে করেন তারা।