RSS

মস্তিষ্কে নতুন ভাবনার উন্মেষ রুদ্ধ করছে ডিজিটাল সামগ্রী

মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, গেমার, আইপড, ইন্টারনেট, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন ডিজিটাল সামগ্রীর উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে বাধাগ্রস্তহয় মানব মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক ইঁদুরের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, ইঁদুরেরা যখনই কোনো নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় তখন তাদের মস্তিষ্কে নতুন ধরনের আলোড়ন তৈরি হয়। কিন্তু এই আলোড়ন তখনই স্থায়ী স্মৃতিতে রূপ নেয় যখন ইঁদুরের মস্তিষ্ক অবসর পায়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লরেন ফ্রাঙ্ক বলেন, 'ডিজিটাল সামগ্রীর কারণে মানুষের মস্তিষ্ক সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকে। এমন কী অবসরের সামান্য দু এক মিনিট সময়ও কেড়ে নেয় ইন্টারনেট কিংবা আইফোন। ফলে মস্কিষ্ক নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। তৈরি হয় অনাবশ্যক ক্লান্তি। 'তার মতে, আমাদের মস্তিষ্ক সচল থাকার সময় যে সব অভিজ্ঞতা হয় সেসব অভিজ্ঞতা মস্তিষ্ক অলস বা বিশ্রামরত অবস্থায় থাকার সময় অনেক ভালোভাবে বিন্যস্ত হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে রূপ লাভ করে। এই গবেষণার সাথে যুক্ত গবেষকরা ইঁদুরের উদাহরণ টেনে বলছেন, তারাও একইভাবে স্মৃতিকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু শেখে। তাই নতুন চিন্তার স্ফুরণ কিংবা শিক্ষণের ক্ষেত্রে ডিজিটাল সামগ্রীর এমন অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতিকর বলে মনে করছেন তারা।

মোবাইল কিংবা সেলফোন কোম্পানিগুলো বর্তমানে তাদের নিত্যনতুন ব্র্যান্ডের সেটে সংযোজন করছেন অকল্পনীয় সব সুবিধা। বোতান টিপলেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুলে যাচ্ছে তথ্যের জগৎ। পাশাপাশি ইমেইল চেক করার সুবিধা থেকে শুরম্ন করে গেম খেলা, রেডিও শোনা এমন কী টেলিভিশন কিংবা সদ্য মুক্তি পাওয়া হলিউডের সিনেমা দেখারও সুযোগ মিলছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। পাশ্চাত্যের সিংহভাগ মানুষের অভ্যাস ঘুম ভেঙেই ফোনের মনিটরের দিকে তাকানো। এছাড়া টয়লেট, প্রাতরাশের টেবিল, ব্যায়ামাগার কিংবা দোকানের লাইনে দাঁড়িয়েও চলছে ইন্টারনেট ব্রাউজিং কিংবা ফোনালাপ। আধুনিক ব্যায়ামাগারগুলোর যন্ত্রের সঙ্গে বর্তমানে আইপড, টেলিভিশন মনিটর ও গেমার সংযুক্ত থাকে। ফলে জাগ্রত অবস্থায় থাকা মুহূর্তগুলোর সিংহভাগ সময়ই ব্যসত্দ থাকছে মস্তিষ্ক। অফিস বা কর্মক্ষেত্রে ডিজিটাল যন্ত্রের ব্যবহার এখন শতভাগ। তাই মস্তিষ্ক অবসর পাচ্ছে না কখনোই।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, কোনো মানুষ যখন প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত কোনো পরিবেশে হেঁটে বেড়ায় তখন সে অনেক বেশি শিখে। অপরদিকে দালান কোঠা পরিবেষ্টিত নগরের রাসত্দায় হাঁটার সময় মস্তিষ্কের শিক্ষণ প্রক্রিয়া সেভাবে কাজ করে না। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তারা বলেছেন, শহরের রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় এত সব তথ্য মানুষকে হজম করতে হয় যার কারণে মস্তিষ্ক হয়ে পড়ে তথ্যভারাক্রান্ত। ফলে দ্রুতই ক্লান্তি ভর করে। এমন কী যখন মানুষ কর্মক্ষেত্রের বাইরে খুব গা-ছাড়াভাবে সময় কাটায় তখনও মস্তিষ্ক ক্লান্ত হওয়ার হাত থেকে রেহাই পায় না। মিশিগানের গবেষকরা উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, 'ধরুন আপনি বাসস্টপে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। এ সময়টা কাজে লাগানোর কথা ভেবে মোবাইলে ডাউনলোড করছেন কোনো গান কিংবা ভিডিও ক্লিপ। আপনি ভাবতে পারেন এভাবে সহজেই সতেজ হওয়া গেল, পাওয়া গেল একটু বিনোদন কিন্তু তা সঠিক নয়। নিজের অজান্তেই আপনি মস্তিকে ব্যতিব্যস্ত রেখে ক্লান্তই করে তুলছেন তাকে।

হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের মনস্তত্ত্ব বিভাগের সহকারী ক্লিনিক্যাল প্রফেসর জন জে রেটি বলেন, 'ব্যায়াম আমাদের জীবনের অংশ হয়ে ওঠা উচিত। আমাদের শুয়ে বসে কাটানো জীবন থেকে শরীরচর্চার মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে হবে।' তিনি আধুনিক ব্যায়ামাগারগুলোতে যেসব ব্যবস্থা রয়েছে তার অনাবশ্যকতা তুলে ধরেন। তার মতে, ডিজিটাল সামগ্রীকে পেছনে ফেলে এসব থেকে ছুটি নিয়ে প্রকৃতির মাঝে হাঁটা কিংবা দৌড়ানোই হল সবচেয়ে উপকারী শরীরচর্চা। এখনকার বহু গবেষকই রেটির সঙ্গে গলা মিলিয়ে ডিজিটাল পণ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। জীবনকে আরো নতুন ভাবনা ও সৃজনশীলতা দিয়ে সাজাতে হলে এসব যন্ত্র-নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তারা।


দ্য নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে