RSS

শিক্ষণ ও স্মৃতি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে স্বপ্ন

ঘুমের ঘোরে দেখা স্বপ্নের কথা মানুষ মনে করতে পারুক বা না পারুক মসত্দিষ্কের স্মৃতি সংরৰণে ও নতুন কিছু শেখার ৰেত্রে স্বপ্নের গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্বপ্ন হতে পারে ভয়ের, সুখের, কাম উত্তেজনার কিংবা অস্বস্তিকর। বিখ্যাত মনোবিদ সিগমুন্ড ফ্রয়েড বলেছেন, স্বপ্ন হল সচেতন মনের প্রতি অচেতন মনের বার্তা।

প্রশ্ন উঠেছে স্বপ্ন কী নিছকই মস্তিষ্কের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ? না-কি এর সত্যি উপকারী দিক রয়েছে। ইদানিং বহু গবেষক বলছেন, স্বপ্ন নতুন ভাবনার জন্ম দেয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন আমরা নতুন যা কিছু শিখছি তাকে সুবিন্যস্ত করে। স্বপ্ন নিয়ে ফয়েডের মনোসমীক্ষণ ও ব্যাখ্যার পর প্রায় এক শতাব্দি কেটে গেছে। তবু স্বপ্ন রহস্যের পুরো সমাধান এখনো পাওয়া যায়নি। গবেষকরা জানিয়েছেন, স্বপ্ন যতই তীব্র ও দীর্ঘ সময়েরই হোক না কেন মানুষ তার খুব অল্প অংশই স্মরণ রাখতে পারে। অনেকে একেবারেই তা ভুলে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে মানুষ স্বপ্নের কথা মনে করতে পারুক বা না পারুক স্মৃতি ও শিক্ষণো তার ভূমিকা রয়েছে।

গবেষকদের মতে মানুষের ঘুমের তিনটি পর্যায় রয়েছে। হালকা, গাঢ় ও গভীর- সাধারণভাবে এই তিনটি সত্দরে ভাগ করা যায় ঘুমকে। হালকা স্তরের নাম বিজ্ঞানের ভাষায় রেম বা র্যাপিড আই মুভমেন্ট। এ সময় চোখের পাতার নিচে অক্ষিগোলক কাঁপতে থাকে এবং মস্তিষ্কের বেশিরভাগ অংশ সজাগ হয়ে ওঠে। একজন মানুষের ঘুমের শতকরা ২০ ভাগ হল রেম পর্যায়ের ঘুম। বেশির ভাগ স্বপ্ন আমরা এ সময়ই দেখি। এ সময় দেখা স্বপ্ন দীর্ঘস্থায়ী ও দৃশ্যময় হয়। রেম পর্যায়ে দেখা স্বপ্ন আমাদের কিছুটা হলেও মনে পড়ে। কিন্তু গভীর ঘুম বা ওয়েভ ঘুমের সময় দেখা স্বপ্ন মনে করা কঠিন। বস্টনে অবস্থিত হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষক রবার্ট স্টিকগোল্ড বলেন, 'রেম ঘুমে দেখা স্বপ্ন আবেগের সঞ্চার করে আমাদের মনে। এছাড়া এই পর্যায়ে স্বপ্ন দেখার সময় জাগ্রত অবস্থার চাইতেও মস্তিস্ক বেশি সচল থাকে। ফলে আমরা সহজেই স্মৃতি, আবেগ ইত্যাদি সঞ্চয় করতে পারি মস্তিষ্কের ভেতর।' অপর দিকে গভীর ঘুমে দেখা স্বপ্ন আমরা তেমন মনে করতে পারি না বলে জানিয়েছেন তিনি।

স্বপ্ন দেখার সময় মসত্দিষ্কের একটি অংশ অপর একটি অংশের কাছে অর্জিত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এবং তাকে স্মৃতিতে পরিণত করে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক জোনাথন উইনসন। তিনি বলেন, 'মস্তিষ্কের 'হিপ্পোক্যাম্পাস' দিনের অর্জিত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে 'নিউকর্টেক্সের' কাছে। এভাবে অভিজ্ঞতাকে শিক্ষায় পরিণত করতে সাহায্য করে স্বপ্ন। নিউরোসায়েন্টিস্ট ও মলিকু্যলার বায়োলজিস্ট ফ্রাঙ্কিস ফ্রিক বলেন, 'আমরা স্বপ্নের মাধ্যমে যেমন গুরম্নত্বপূর্ণ স্মৃতি ফিরে পাই ঠিক তেমনটি বেদরকারী ও অস্বস্তিকর স্মৃতিকেও ঝেটিয়ে বিদায় করি।' স্বপ্ন কী করে আমাদের অজান্তেই একটি স্মৃতিকে জাগ্রহ করে তার উদাহরণও দিয়েছেন গবেষকরা। হার্ভার্ডের গবেষক স্টিকগোল্ডের মতে, জাগ্রত অবস্থায় মস্তিষ্ক যে সমস্যার সমাধান করতে পারে না স্বপ্ন তা অনেক সময় করে দেখায়। তিনি বলেন, 'অনেক সময় এমন হয় যে আপনি কোনো ব্যক্তির নাম ভুলে গেলেন। সারা দিনেও তা মনে পড়লো না। বিষয়টি মাথার মধ্যে সেভাবেই রয়ে গেল দিনভর। কিন্তু রাতে স্বপ্নের সময় মস্তিষ্কের অতি সক্রিয় অবস্থা ঠিক স্মৃতি থেকে খুঁজে বের করবে সেই নাম। যা সকালে ঘুম ভেঙে আপনার মনে পড়ে যেতে পারে।'


এবিসি সায়েন্স নিউজ অনলাইন