RSS

মানুষের দৈহিক গঠনে ভিন্নতার জন্য দায়ী ডিএনএর খোঁজ মিলেছে

দু'জন মানুষের চেহারা ও শারীরিক গঠন কখনো একরকম হয় না। এমনকী যমজ ভাইবোনদের আপাতদৃষ্টিতে সাদৃশ্যপূর্ণ মনে হলেও তাদের মধ্যেও একই রকম বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। পৃথিবীতে একই রকম দৈহিক গঠনযুক্ত দু'জন মানুষ কখনো পাওয়া সম্ভব নয়। এর কারণ হল তাদের জিনগত স্বাতন্ত্র্য। প্রতিটি মানুষের ভিন্নতার সাথে তাই সম্পর্ক রয়েছে জিনের গঠনের। জিনবিদ্যা বা বংশগতির জনক গ্রেগর জোহান মেন্ডেল ১৮৫৬ সালে মটরগাছ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এ সম্পর্কে প্রথম মানুষকে ধারণা দেন। এরপর প্রায় একশতাব্দীরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এ বিষয়ে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। তবে সম্প্রতি মানুষের জিন নক্সা আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীরা মানবদেহের রহস্য উন্মোচনে অনেকদূর অগ্রগতি অর্জন করেছেন।

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মানুষের জিন নক্সা বা জিনোম বিশেস্নষণ করে এমন একটি ডিএনএ আবিষ্কার করেছেন যা শারীরিক ভিন্নতার জন্য দায়ী বলে তারা মনে করছেন। সম্প্রতি 'সেল' নামের একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ সংক্রানত্দ তথ্য তুলে ধরা হয়। মানবকোষের ডিএনএর মধ্যে এমন একটি সঞ্চারণশীল খণ্ডাংশ তারা আবিষ্কার করেছেন যেটি খুব দ্রম্নত নিজের প্রতিরূপ তৈরি করতে পারে, ইচ্ছেমত স্থান বদল করতে পারে এবং ডিএনএর যেকোনো স্থানে ঢুকে পড়তে পারে। ডিএনএর এই খণ্ডাংশের নাম দিয়েছেন তারা 'ট্রান্সপোসনস'। 'ট্রান্সপোসনস' ডিএনএর মধ্যে ঠিক কীভাবে সজ্জিত রয়েছে তার উপর নির্ভর করে একজন লম্বা না বেঁটে, কোঁকড়ানো চুল না কালো বর্ণের অধিকারী হবে। এই ডিএনএ খণ্ডাংশের বৈচিত্র্যের জন্যই একজন মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকি জন্মগতভাবে বেশি আবার কারো কম থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আবিষ্কারের ফলে কোন ব্যক্তি কী ধরনের রোগে আক্রানত্দ হতে পারে তা আগে থেকে বলে দেয়া সম্ভব।

বিজ্ঞানীরা বিশেষ একধরনের চিপ ব্যবহার করেছেন এই গবেষণায় যেটিতে মানব জিনোমের সব ধরনের ডিএনএ সজ্জা বা সিকোয়েন্স রয়েছে। ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের রক্ত থেকে সংগৃহীত ডিএনএর সাথে চিপের মধ্যে থাকা জিনোমের ডিএনএ সজ্জার তুলনা করেন তারা। এ ধরনের বিশেস্নষণ থেকেই 'ট্রান্সপোসনস' এর বৈচিত্র্যময় উপস্থিতি চোখে পড়ে বিজ্ঞানীদের। ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক থেকে নেয়া ডিএনএগুলোর প্রতিটিতে প্রায় ১০০ টির উপর 'ট্রান্সপোসনস' এর উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছেন তারা। 'ট্রান্সপোসনস' এর এ ধরনের বিচিত্র সজ্জাই ব্যক্তির ভিন্নতার জন্য দায়ী বলে জানান জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. জেফ বোয়েক।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন