RSS

শিশুদের খালি পায়ে হাঁটতে দিন

অনেক বাবা মা হাঁটতে শেখার পর থেকেই শিশুদের জুতো পরিয়ে রাখেন। 'স্যান্ডেল বা জুতো ছাড়া হাঁটা বারণ'-এমন নিষেধ শুনতে হয় প্রায় প্রতিটি শিশুকে। বহু বাবা মা আবার শিশুকে শক্ত ও হিলযুক্ত জুতো পরান। পছন্দের জুতো পরার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে চান শিশুর পা জোড়া। অথচ পায়ের জন্ম হয়েছে হাঁটার জন্য, জুতো পরে থাকার জন্য নয়। জুতো জোড়া বড় জোর পাকে আঘাত থেকে রৰা করে। তবে শিশু বিশেষজ্ঞদের সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, জুতো পাকে রৰা করার বদলে বরং পায়ের ৰতি করে। যুক্তরাজ্যের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও শিশুদের পায়ের গঠন নিয়ে দীর্ঘকাল গবেষণার সঙ্গে যুক্ত গবেষক ট্রেসি বার্নি বলেন, 'জুতো পরে হাঁটলে শিশুদের পায়ের স্বাভাবিক গঠন পাল্টে যায় এবং মসত্দিষ্কের বিকাশও বাধাগ্রসত্দ হয়।' তার মতে একটি শিশু যখন খালি পায়ে হাঁটে তখন তার মসত্দিষ্ক সতর্ক ও সংবেদনশীল থাকে। মাটিতে নগ্নপায়ের স্পর্শ তাকে পরিবেশ ও পরিপাশর্্ব সম্পর্কে অবিরাম তথ্য জোগায়। এ সময় শিশু সতর্ক থাকে এবং হাঁটার নিয়ম ও ছন্দ রপ্ত করতে চেষ্টা করে। অপরদিকে জুতো পরে হাঁটলে নিচের দিকে তাকানোর প্রয়োজন পড়ে না তার। ফলে মাটির সাথে পায়ের স্পর্শের ফলে যে অনিন্দ্য অনুভূতির জন্ম হয় তা থেকে সে বঞ্চিত থেকে যায়। কেবল তাই নয়, খালি পায়ে হাঁটলে পায়ের পেশি, লিগামেন্ট এবং পায়ের পাতার হাড় সুগঠিত হয়। পাশাপাশি এমন অভ্যাস পায়ের পাতার ভারসাম্য তৈরি করে এবং পরিবেশ ও পরিপাশ্বর্ের সঙ্গে একটি শিশুর স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়। ফলে শিশুরা খুব ভালো হাঁটার ভঙ্গি রপ্ত করে সহজেই।


'দ্য ফুট' নামে শিশুদের পায়ের স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি চিকিৎসা সাময়িকীতে অনুরূপ একটি গবেষণা প্রতিবেদন ছাপা হয় এর আগে। সে গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, জুতো শিশুদের পায়ের স্বাভাবিক গঠনকে নষ্ট করে। খালি পায়ে হাঁটলে পা প্রাকৃতিক নিয়মে স্বাভাবিকভাবেই হাঁটা চলার উপযুক্ত হয়ে বেড়ে ওঠে। অপরদিকে জুতো পরার অভ্যাসের কারণে পা হয় ত্রম্নটিপূর্ণ। ২৫ বছর ধরে নগ্নপদে হাঁটছেন যুক্তরাজ্যের স্কুল শিৰক জন উডওয়ার্ড। তিনি বলেন, 'এটা সত্যি যে আমরা আদিম যুগে বসবাস করছি না। নাগরিক জীবনে শহরে চলতে ফিরতে পা জোড়াকে বিপদের হাত থেকে রৰা করতে জুতো প্রয়োজন। কিন্তু আমরা ভুলে গেছি এটা সার্বৰণিক কোনো ব্যবস্থা নয়। জুতো আমাদের ৰণিকের প্রয়োজন মেটায় মাত্র।' তার মতে অধিকাংশ বাবা মা সনত্দানদের সাইজমত জুতো পরানোর জন্য উৎকণ্ঠিত। বাবা মায়েরা সনত্দানদের নির্দিষ্ট সাইজের জুতো পরাতে পারলেই সন্তুষ্ট। পা বেঢপ হয়ে পড়লে বাজারের কোনো জুতোই সনত্দানের পায়ে লাগবে না এমন দুশ্চিনত্দাও তাদের মনে কাজ করে বলে তিনি মনে করেন। একবার একটি রেসত্দোরাঁয় তাকে খালি পায়ে দেখে একটি শিশুও সাথে সাথে জুতো জোড়া খুলে ফেলে। সে অভিজ্ঞতার বিবরণ দিতে গিয়ে উডওয়ার্ড বলেন, 'শিশুটি জুতো খুলে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে তার মা তাকে দ্রম্নত জুতো পরে নিতে নির্দেশ দেন। মা তার সনত্দানকে বলছিলেন, তুমি যদি জুতো না পর তবে তোমার পায়ে আর কোনো জুতোই আঁটবে না।' উডওয়ার্ডের মতে, মায়েরা জুতোর জন্য যতটা শংকিত শিশুর পায়ের জন্য ততটা নন।

উডওয়ার্ড মনে করেন মানুষের পা হাঁটা চলা, দৌড়ানো, বাধা ডিঙানো, গাছে চড়া ইত্যাদি সবকিছুর জন্য উপযুক্ত। জুতো পায়ের সেই সৰমতাকে নষ্ট করে।

গবেষকদের মতে, শিশুদের পা পূর্ণ বয়স্কদের পায়ের মত সুগঠিত থাকে না। পায়ের পাতায় যে ২৮টি হাড় থাকে সেসবের পরিপূর্ণ বিকাশ হতে অনত্দত ১০ থেকে ১২ বছর সময় লাগে। প্রধানত তরম্নণাস্থি এবং পেশি দ্বারা গঠিত শিশুদের পা একবার জুতোর ভেতরে ঢুকলে তাই বিকশিত হবার সুযোগ পায় না। শিশুদের পায়ের এবং মসত্দিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য তাই নগ্নপদে হাঁটাকেই সমর্থন করেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন