
১৯২৮ সালে আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিন আবিষ্কারের পূর্বে পৃথিবীর যে পরিস্থিতি ছিল মানুষ আবারো সে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে শুরু করেছে বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিজ্ঞানীরা। পেনিসিলিনপূর্ব পৃথিবীতে এপেন্ডিসাইটিসের মত ছোটখাট অপারেশনও ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। বিজ্ঞানীদের মতে তেমন পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। ভারতসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে অপারেশনের পর রোগীর দেহে এ ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ ঘটছে। হাসপাতাল থেকে সংক্রমিত 'হসপিটাল নিউমোনিয়া' বা 'সেপটিসেমিয়াতে' মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ারও অন্যতম কারণ ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া।
ওষুধের বিরুদ্ধে ব্যাকটেরিয়াদের এই বিজয়ে বিস্মিত নন অধ্যাপক টিম ওয়ালশ এবং তার সহকর্মীরা। তারা জানান, বিষয়টি বোঝা যাবে ডারউইনের সূত্র থেকে। ডারউইন বলেছেন, 'প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্যই জীব নিজের দেহে পরিবর্তন আনে। এই পরিবর্তনের অব্যাহত ধারাই হল বিবর্তন।' ব্যাকটেরিয়াগুলো সম্প্রতি ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রেও বিবর্তন কাজ করছে। বিজ্ঞানীদের মতে, জীবমণ্ডলীর মধ্যে ব্যাকটেরিয়াদের অভিযোজন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। তাই কিছুকাল পরপরই তারা এক একটি এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। অর্থাৎ সেসব এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অর্জন করে। সম্প্রতি যে সব ব্যাকটেরিয়াতে 'এনডিএম-১' জিন পাওয়া গেছে তারা কেপিসি নামের এক প্রকার এনজাইম তৈরি করে যার প্রভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী এন্টিবায়োটিকটিও কাজ করে না। এই ক্ষমতা ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে এসেছে বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই। তাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণেই তারা ধীরে ধীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে সব ওষুধের বিরুদ্ধে।
জীবাণুর বিরুদ্ধে মানুষের দীর্ঘস্থায়ী এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়াদেরই জয় হবে বলে আশংকা করছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, এর ফলে ভবিষ্যতে যেকোনো আঙ্গ প্রতিস্থাপনের অপারেশন করা যাবে না কারণ এসব অপারেশনের সময় রোগীকে এমন ওষুধ দেয়া হয় যা দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বিকল্প হিসেবে এন্টিবায়োটিক দেয়া হয় রোগীকে যা তাকে রক্ষা করে সংক্রমণের হাত থেকে। কিন্তু ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর আবির্ভাবের ফলে এখন থেকে আর এমন অপারেশনে এন্টিবায়োটিক কাজ করবে না। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাবে এপেন্ডিক্স অপারেশনের মত সব ধরনের ছোটখাট অপারেশনও। কারণ তাতে রোগীর সেপটিসেমিয়া হওয়ার আশংকা থাকবে। বৃদ্ধ এবং শিশুদের প্রাণঘাতি নিউমোনিয়ার হাত থেকে রক্ষার কোনো উপায় থাকবে না। এসব রোগে বিশ্বজুড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যাবে। গনোরিয়া কিংবা যক্ষা দেখা দিতে পারে মহামারি আকারে। এসব রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ওষুধই থাকবে না মানুষের হাতে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন